Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘দ্য গ্রেভস ওয়াচ’: এক মৃত্যুদূত ঘড়ির গল্প

এই পৃথিবীতে মৃত্যুকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। প্রবাদ আছে, কোনো ব্যক্তি তার মৃত্যুর পরও পৃথিবীতে তার প্রিয় জিনিসটির প্রতি মায়া সহজে কাটতে চায় না। অশরীরী রূপ ধরে হলেও তার প্রিয় জিনিসটি তাকে পেতেই হবে। মৃত্যু সংক্রান্ত প্রবাদ এটাও বলে, মায়া কাটাতে না পারলে অতৃপ্ত আত্মা থেকে যায় পৃথিবীতেই! তার মুক্তিলাভ হয় না!

অভিশপ্ত সেই ঘড়ি; Image Source: opposingviews.com

ব্রিটেনের ‘মিরর’ পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ১৯২৫ সালে ছবিতে দেখানো অভিশপ্ত এই ঘড়িটি তৈরি করেন সেই সময়ের বিখ্যাত ঘড়ি প্রস্তুতকারক প্যাটিক ফিলিপ। তার নাম অনুসারেই পকেট ঘড়িটির নাম দেয়া হয় ‘দ্য প্যাটিক’। ঘড়িটিতে অত্যাধুনিক সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। ক্যালেন্ডার, পূর্ণিমা ও অমাবস্যার হিসেব রাখার বিশেষ যন্ত্র এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময়ের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। এছাড়াও ঘড়িটিতে রয়েছে আরও ২৪টি বিশেষ ধরনের অত্যাধুনিক ফিচার, যা একমাত্র বহুমূল্যের ঘড়িতে দেখা যায়।

প্যাটিক ফিলিপের প্রতিষ্ঠানে তৈরি অত্যাধুনিক ফিচারের সেই সময়ের বহুমূল্যবান ঘড়ি; Image Source: ‍swns.com

সে সময় কম্পিউটার প্রযুক্তি আসে নি। তারপরও প্যাটিক ফিলিপের মতো অসামান্য প্রযুক্তিবিদের সহায়তায় ঘড়িটি বাস্তব রূপ পায়। প্রযুক্তির দিক থেকে এই ঘড়িটি অন্য ঘড়ি থেকে ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। কোনোরূপ যান্ত্রিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া শুধুমাত্র হাতে তৈরি করা হয় এই ঘড়ি।

ঘড়ি প্রস্তুতকারক প্রযুক্তিবিদ প্যাটিক ফিলিপ; Image Source: culture.pl

ঘড়িটির কাঁটা থেকে শুরু করে সব যন্ত্রপাতিই নিরেট সোনার। এক তথ্য থেকে জানা যায়, ১৮ ক্যারেটের সোনা দিয়ে তৈরি এই ঘড়িটি ডিজাইন করতে প্রায় তিন বছর সময় লেগেছিল। আর তৈরি করতে লেগেছিল পাঁচ বছর। কথিত রয়েছে, এই ঘড়িটি অভিশপ্ত। ঘড়িটি যারই হস্তগত হয়েছে, সে-ই বেশিদিন এই পৃথিবীর আলো দেখতে পারেনি। এই ঘড়িটি তার মালিকের জীবনে মৃত্যু ডেকে আনে। এই ঘটনার সূত্র ধরে ঘড়িটির নাম হয়ে গিয়েছে ‘দ্য গ্রেভস ওয়াচ’ বা কবরের ঘড়ি।

কীভাবে এই ঘড়িটি মানুষের মৃত্যু ডেকে আনে চলুন তাহলে সেই গল্প শুনি।

অভিশপ্ত এই ঘড়ির ইতিহাস বলছে, এর প্রথম মালিক ছিলেন হেনরি গ্রেভস জুনিয়র নামের একজন স্বনামধন্য আমেরিকান ব্যাঙ্কার। তিনি বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক ছিলেন। ঘড়ি সংগ্রাহক হিসেবে তার বেশ সুনাম ছিল। ১৯৩৩ সালে পনের হাজার ডলারে তিনি ঘড়িটি কিনেন। তিনি ঘড়িটির নাম দেন ‘Holy Grail’।

‘দ্য প্যাটিক’ ঘড়ির প্রথম মালিক স্বনামধন্য আমেরিকান ব্যাঙ্কার হেনরি গ্রেভস জুনিয়র; Image Source: thejewelleryeditor.com

হেনরি আশা করেছিলেন ঘড়িটি তার জন্য শুভ হবে। কিন্ত তা হয়নি। এই ঘড়ি কেনার বছরেই আমেরিকায় ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক মন্দা দেখে দেয়। আমেরিকার মানুষের মধ্যে তীব্র অর্থাভাব দেখা দেয়। এর ফলে হেনরির মনে এক ধরনের ধারণা জন্মে যে, ঘড়িটির অভিশাপেই এসব হচ্ছে। একদিন তিনি তার কন্যাকে নিয়ে নিউইয়র্কের একটি লেকে নৌভ্রমণ করতে গিয়ে ঘড়িটি নদীতে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হেনরির মেয়ে তাকে বুঝিয়ে ঘড়ি ফেলে দেয়া থেকে নিবৃত করেন।

কিন্তু হেনরির মনে প্রতিনিয়ত ঘড়িটি সম্পর্কে একধরনের হতাশা কাজ করত। তার প্রায়ই মনে হতো ঘড়িটি অভিশপ্ত। ঘড়ি কেনার সাত মাসের মাথায় তার এক ঘনিষ্ট বন্ধু মারা যান। এর কিছু দিন পর আরো ভয়াবহ বিপর্যয় আসে তার জীবনে। ১৯৩৪ সালের নভেম্বর মাসে হেনরির ছোট ছেলে জর্জ ক্যালিফোর্নিয়ার এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মৃত্যবরণ করে।

হেনরির জীবনে এই ঘড়ি আসার কিছুদিন পর থেকে ঘটতে থাকা অভিশপ্ত নানা ঘটনা; Image Source: bbc.com

পরবর্তীতে এ-ও জানা যায় যে, ১৯২২ সালের দিকে হেনরি যখন প্যাটিক ফিলিপের সাথে এই ঘড়ি তৈরির ব্যাপারে কথা চালাচালি করছিলেন, সেসময় তার বড় ছেলেও এক গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। এভাবেই ঘড়িটি সম্পর্কে সকলের মনে কুসংস্কার জন্মে যে, ঘড়িটি মানুষের জীবনে শুভময় দিনের পরিবর্তে দুঃখময় রজনী উপহার দিতেই সিদ্ধহস্ত। ফলে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে ঘড়িটির অভিশপ্ততার কথা।

১৯৫৩ সালে ছিয়াশি বছর বয়সে হেনরি গ্রেভস জুনিয়র মারা যাওয়ার পর এই ঘড়ির উত্তরাধিকার সূত্রে হেনরীর কন্যা গুইনডনের অধিকারে আসে। কিন্তু তিনিও তা বেশি দিনে নিজের কাছে রাখতে পারেননি। ১৯৬০ সালে গুইনডনের মৃত্যুর পর  তার একমাত্র সন্তান রেজিনাল্ড ফুলারটন ঘড়িটির উত্তরাধিকারী হন। তিনি ঘড়িটি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের এক সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ীর কাছে দুই মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন। পরে ঐ ব্যবসায়ী ঘড়িটি ইলিনয়ের রকফোর্ড জাদুঘরে দান করে দেন।

শিকাগোর মিউজিয়াম অব সায়েন্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি যাতে ঘড়িটি সংরক্ষিত ছিল; Image Source: aviewoncities.com

১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ঘড়িটি অভিশপ্ত ঘড়িটি রকফোর্ড জাদুঘরে শোভা পেতে থাকে। ১৯৯৯ সালে জাদুঘরটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে জাদুঘরের সম্পদগুলো শিকাগোর মিউজিয়াম অব সায়েন্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিতে স্থানান্তরিত করা হয়। এখানে হেনরির ঘড়িটি নিলামে উঠে। ১১ মিলিয়ন ডলারে ঘড়িটি তখন কিনে নেন নিউইয়র্কের একজন নামজাদা ব্যবসায়ী। এ সময় পর্যন্ত ঘড়িটির অভিশপ্ততার কথা একরকম চাপা পড়ে গিয়েছিল অথবা কোনো এক অজ্ঞাত বা ব্যবসায়িক কারণে এই ঘড়িটির কীর্তিকলাপকে চাপা রাখা হয়েছিল।

১৮ ক্যারেটের সোনা দিয়ে তৈরি এই ঘড়িটি এখনো তার উজ্জ্বলতা হারায়নি; Image Source: AFP

সময়ের পরিক্রমায় এরপর কেটে গিয়েছে বহু বছর। পরিবর্তনের যুগে এই ঘড়িটির ভয়াবহতা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন সকলে। কিন্তু সম্প্রতি একটি খবর আবার ঘড়িটিকে সকলের সামনে পুরনো স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে। কিছু দিন আগে ঘড়িটি কেনেন কাতার রাজপরিবারের এক বিশিষ্ট ব্যক্তি বিন মহম্মদ আলথানি। দেশে তিনি একজন আর্টের সমঝদার ও গুণগ্রাহক বলেই পরিচিত। লোভনীয় এই ঘড়িটি কেনা থেকে নিজেকে সংবরণ করতে পারে নি তিনি। অনেকটা ঝোঁকের বশবর্তী হয়ে কিনে বসেন ঘড়িটি। ২৪ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে সুইজারল্যান্ডের একটি অকশন হাউস থেকে ঘড়িটি কেনেন তিনি যা ১৯৯৯ সালের বিক্রির রেকর্ড ভেঙে দেয়।

সুইজারল্যান্ডের একটি অকশন হাউস নিলামে তোলা হচ্ছে ঘড়িটি; Image Source: journal.hautehorlogerie.org

সময়ের সাথে সাথে ঘড়িটির ইতিহাস অনেকের কাছে বিস্মৃত হয়ে গেলেও ঘড়ি কিন্তু তার নিজের ইতিহাস মোটেই ভোলেনি৷ সেটির প্রমাণও মিলল কিছু দিনের মধ্যে। ঘড়িটি কেনার মাত্র কয়েকদিন পরেই মারা গেলেন বিন মহম্মদ আলথানি। মাত্র ৪৮ বছর বয়সে লন্ডনে নিজের বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে আবার একবার ‘দ্য গ্রেভস’ এর মালিকের স্থান হলো সেই কবরের নিরেট অন্ধকারে।

ব্যবসায়ী বিন মহম্মদ আলথানি যিনি ছিলেন ঘড়ির সর্বশেষ মালিক; Image Source: Wiki / Reuters

এভাবে সময়ে সময়ে ঘড়িটি তার রূপ ধারণ করে। আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা এইসব ঘটনাকে হেসেই উড়িয়ে দেবে। বলতেই পারেন, হেনরীর ছেলের মৃত্যু তো দৈব দুঘর্টনা। আর তার বন্ধু বা কাতারের ধনকুবের বিন মহম্মদ আলথানি তো রোগে মারা গেছে। কিন্তু সময়টা আমাদেরকে ভাবায়। হেনরির বয়ানেও তার এক ধরনের স্বীকারোক্তি পাওয়া যায় যে, ‘ঘড়িটি তার জীবনে সত্যিই অভিশপ্ত ছিল।’

এ সিরিজের আগের পর্ব:

১) এক ভৌতিক অভিশপ্ত নগরীর গল্প

২) এক ভয়ঙ্কর অভিশপ্ত কুয়োর গল্প

৩) ভূতুড়ে পুতুলের দ্বীপে – মেক্সিকোর আইল্যান্ড অব দ্যা ডলস

 

 

This article is in Bangla language. It's about the grave watch.

Featured Image: AFP

Source:

১) en.wikipedia.org/wiki/Patek_Philippe_Henry_Graves_Supercomplication
২) bbc.com/news/blogs-magazine-monitor-30002096
৩) en.wikipedia.org/wiki/Henry_Graves_(banker)
৪) dailymail.co.uk/news/article-2833820/Curse-15million-watch-Haunting-story-elaborate-watch-man-wished-never-owner-it.html
৫) news.com.au/technology/innovation/billionaire-owner-of-henry-graves-supercomplication-timepiece-dies-two-days-before-24m-watch-goes-on-sale/news-story/1da1c712d77fc12296c7cae1e1abe395
৬) seeksghosts.blogspot.com/2014/12/the-cursed-henry-graves-watch.html

Related Articles