Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মাদ্রিদ ডার্বির রোমাঞ্চকর পাঁচ মুহূর্ত

অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ এবং রিয়াল মাদ্রিদের লোগো

সিবেলি, ফ্রিজিয়ানদের জন্য মৃত্তিকা, পশুপাখি, উর্বরতা এবং প্রকৃতির দেবী। অন্যদিকে নেপচুন, স্যাটার্নের জ্যেষ্ঠ ছেলে এবং রোমান জল দেবতা, যিনি সাগরের তলদেশে বাস করেন এবং নিয়ন্ত্রণ করেন সাগর। হাতের ত্রিশূল দিয়ে তিনি যখন যেখানে ইচ্ছে আলোড়ন তৈরী করেন, সৃষ্টি করেন ঝড়ের।

উপরের লাইনগুলো পড়ে কিছুটা অস্বস্তিতে পরেছেন নিশ্চয়? পড়াটাই স্বাভাবিক। কেননা শিরোনাম তো ফুটবল বিষয়ক আলোচনার দিকে ইঙ্গিত করছে। তাহলে এর মধ্যে পৌরাণিক গল্প এলো কেমন করে? উত্তরটা সহজ। মাদ্রিদ ডার্বির সৌরভ মাঠের বাইরে এতোটাই প্রভাবশালী যে, এর সাথে নানান রকম গল্পও জড়িয়ে গেছে। সিবেলিস এবং নেপচুন এর গল্পটাও তেমনি একটা গল্প। ইতিহাসের খুব গভীরে না গিয়ে সহজ ভাষায় বললে ব্যাপারটা দাঁড়ায় যে, রিয়াল মাদ্রিদ জিতলে মাদ্রিদিস্তারা দেবী সিবেলিস এর মূর্তির নিচে অবস্থিত ঝর্নার সামনে এসে বিজয় উদযাপন করে। আর অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ জিতলে সমর্থকরা এসে জড়ো হয় নেপচুনের ত্রিশূলের নিচে। আর এভাবেই মাদ্রিদ ডার্বির সাথে জড়িয়ে গেছে এই দুই পৌরাণিক দেব-দেবীর নাম।

যদি আপনি কখনো মাদ্রিদ ডার্বি দেখে থাকেন, তাহলে আপনি দেখেছেন ফুটবল মাঠে দুটি দলের লড়াই কিভাবে যুদ্ধের রূপ নেয়, আপনি অনুভব করেছেন আপনার শরীরে অ্যাড্রেনালিন কত দ্রুত ওঠানামা করে, আপনি স্বাদ পেয়েছে জমজমাট ফুটবল লড়াইয়ের। হ্যাঁ, মাদ্রিদ ডার্বি এখন কেবল ফুটবল মাঠেই আর সীমাবদ্ধ থাকে না, মাঠের বাইরে কোটি দর্শকের মনে রোমাঞ্চকর শিহরণ জাগায়।

রিয়াল মাদ্রিদ যখন ডার্বি জয় করে, তখন সমর্থকরা অভিধানের সকল শব্দ ব্যবহার করে ফেলে তাদের দলের প্রশংসায়। আবার অ্যাথলেটিকো জিতে গেলে তাদের সমর্থকদের কলম যেন প্রশংসা করার জন্য সমুদ্রদেবতা পোসাইডনের কলম হয়ে যায়! তবে চায়ের আসরে কথার লড়াই কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে লেখার লড়াই, উভয়কে ছাড়িয়ে জয় হয় ফুটবলেরই।

ডার্বি বলতে মূলত একটি বড় শহরের দুটি ফুটবল ক্লাব থাকলে তাদের মধ্যে লড়াই বোঝায়। অনেকের মতে মাদ্রিদ ডার্বির দ্বন্দ্ব শুরু হয় ১৯০৩ সালে যখন অ্যাতলেটিক বিলবাও স্পেন চ্যাম্পিয়নশিপ জয় করে মাদ্রিদের বিপক্ষে। তখন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারস কলেজের কিছু শিক্ষার্থী সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা নিজেদের রাজধানীতে বিলবাও এর মতোই একটি ক্লাব তৈরী করবে। এই সিদ্ধান্তের এক মাসের মাথায় অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ ক্লাবের সূচনা হয়।

১৯৬৩ সালের একটি মাদ্রিদ ডার্বি; ছবিসূত্রঃ ticketbureau.com

১৯২৩ সালে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ বিলবাও থেকে আলাদা হয়ে একক স্বাধীন দল হিসেবে খেলতে শুরু করে। তবে শুরুতেই অ্যাতলেটিকো রিয়াল মাদ্রিদের মতো শক্তিশালী দলের সাথে পেরে উঠতে পারেনি। মাদ্রিদের দুই দলের এই প্রতিযোগীতা আকর্ষণীয় হতে শুরু করে ১৯২৯ এর পর থেকে। তবে ফুটবল বিশ্বের আরও কিছু জনপ্রিয় ডার্বি যেমন- মিলান ডার্বি, ম্যানচেস্টার ডার্বির মতো জনপ্রিয়তা পেতে মাদ্রিদ ডার্বির আরও অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়। মাদ্রিদ ডার্বি সত্যিকার অর্থে প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ১৯৭৭ সালে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে লীগ কাপ জয়ের মাধ্যমে। তবে মাদ্রিদ ডার্বির উত্থান যেভাবেই হোক না কেন, বর্তমানে এই লড়াই কেবল ফুটবলের লড়াই নয়, এই লড়াই এখন দুটি দলের গৌরবেরও লড়াই।

লড়াই যেমনই হোক, সাফল্যে রিয়াল অ্যাতলেটিকোর চেয়ে অনেক এগিয়ে। অধিকাংশ সময়ই রিয়াল হাসিমুখে মাঠ ছাড়তে পেরেছে। অন্যদিকে অ্যাতলেটিকোও সমানে লড়াই করে গেছে এবং সাফল্য তাদের একেবারে খাটো করেও দেখা যাবে না। এই সাফল্য ব্যর্থতার হিসাব নাহয় পরে করা যাবে, এখন চলুন জেনে নিই মাদ্রিদ ডার্বির ইতিহাসে রঙে, ঢঙে, রোমাঞ্চে আর প্রতিদ্বন্দ্বীতায় ভরা পাঁচটি মূহুর্তের ইতিহাস।

১) ইউরোপীয়ান কাপ সেমিফাইনাল- ১৯৫৯

গোল করছেন পুসকাস; ছবিসূত্রঃ beyondthelastman.com

গল্পটা ১৯৫৯ সালের ইউরোপিয়ান কাপের। তখনকার ইউরোপিয়ান কাপকেই আজ আমরা চ্যাম্পিয়নস লীগ হিসেবে জানি। ইউরোপের তৎকালীন সেরা ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ততদিনে দোর্দন্ড প্রতাপে তিনটি কাপ ঘরে তুলেছে । তাও আবার সেই তিনটি কাপ রিয়াল জিতেছে পরপর তিন আসরে! তাদের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয়া হয়ে গেছে ততদিনে। তবে এবারে যেন অন্য কিছুই হতে চলেছে। অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ যেন পণ করেছে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়েই ছাড়বে। ঘরোয়া লীগেও সেই বছর ডার্বি জিতেছে রোজি ব্লাঙ্কোসরা। ইউরোপিয়ান কাপে জিতলে তো তা হবে আরও আনন্দের ব্যাপার। অন্যদিকে লস ব্লাঙ্কোসরা ঘরোয়া লীগে বার্সেলোনার কাছে মুকুট হারিয়ে দ্বিতীয় হওয়ার দগদগে ক্ষত নিয়েই মাঠে নেমেছে, তারাই বা ম্যাচ হাতছাড়া করবে কেন?

ফল যা হবার তাই হলো। সেমিফাইনালের দুই  লেগ মিলিয়ে ২-২ গোলে সমতা। ফলে প্রয়োজন পড়ল একটি প্লে-অফ ম্যাচের। মাদ্রিদের জারাগোজায় অনুষ্ঠিত হল সেই ধ্রুপদী ম্যাচ। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ১৬ মিনিটেই মাদ্রিদ গ্রেট আলফ্রেড ডি স্টেফানোর গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। সমতায় ফিরতে দেরি হয়নি অ্যাতলেটিকোরও। আগের দুই ম্যাচে গোল করা কলারই আবার গোল করে দলকে ম্যাচে ফেরান। ৩২ মিনিটে এই গোল হবার পর অ্যাতলেটিকো কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলা শুরু করে। কিন্তু ফেরেঙ্ক পুসকাস যে আছেন রক্ষণভাগে চিড় ধরানোর জন্য! ৪২ মিনিটে তার জাদুকরী এক হেডারে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। সেই ব্যবধান আর কমাতে পারেনি  অ্যাতলেটিকো। ফলে টানা চতুর্থবারের মতো ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে চলে যায় রিয়াল এবং সেখান থেকে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জয় করেই ঘরে ফেরে লস ব্লাঙ্কোসরা।

২) লুই অ্যারাগনের গালিগালাজ!

অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের সাবেক ম্যানেজার লুই অ্যারাগন; ছবিসূত্রঃbilgiustam.com

১৯৫৯ সালের ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালই দুই নগর প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে যুদ্ধের আবহ সৃষ্টি করে রেখেছিল। কেবল বাকি ছিল একটি উপযুক্ত যুদ্ধক্ষেত্রের। ১৯৯২ সালের কোপা দেল রের ফাইনাল তাই যুদ্ধের মঞ্চ হয়েই আবির্ভূত হয়েছিল। আর সেই যুদ্ধের মঞ্চে জয়ী ছিল অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদই। তবে মাঠের খেলা ছাপিয়ে যা সবচেয়ে বেশি আলোচিত বা সমালোচিত হয়েছিল তা হচ্ছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের তৎকালীন ম্যানেজার লুই অ্যারাগনের কিছু উত্তপ্ত বাক্য। খেলোয়াড়দের রিয়ালের বিপক্ষে তাতিয়ে তুলতে গিয়ে লুই এমন কিছু কথাই বলেন যা সম্ভবত ফুটবল বিশ্বের আর কোনো কোচ কখনো বলেনি।

দ্য গার্ডিয়ানের সাংবাদিক জ্যাকব স্টেইনবার্গের বর্ণনায় জানা যায়, লুই ম্যাচের পূর্বে একটি পানির বোতল হাতে তার খেলোয়াড়দের সামনে যান এবং ক্রুদ্ধ স্বরে তাদেরকে বলতে থাকেন- “এই বোতলটি দেখতে পাও? আমরা এখন তাদের (রিয়াল মাদ্রিদ এর খেলোয়াড়দের) গুহ্যদ্বারে এটি প্রবেশ করাতে যাচ্ছি! একেবারে সঠিক ভাবে। ট্যাকটিক্স ভুলে যাও। ওরা দীর্ঘদিন বার্নাব্যুতে আমাদের সাথে একই কাজ করে আসছে। আজ আমাদের সুযোগ তাদের সাথে করার!” কথাগুলো শুনে কি ভড়কে গেলেন? একইভাবে ভড়কে গিয়েছিল অ্যাতলেটিকোর খেলোয়াড়রাও। তবে কে জানে, পেছন থেকে বোতল প্রবেশ করাবেন কোচ, এই ভয়েই হয়তো সেদিন অ্যাতলেটিকো খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দিয়ে খেলেছিল আর ম্যাচ জিতেছিল ২-০ তে।

৩) ‘রাউল মাদ্রিদ’ এর যাত্রা শুরু!

রিয়ালের হয়ে অ্যাতলেটিকোর বিপক্ষে রাউলের প্রথম গোল; ছবিসূত্রঃ runningtheshowblog.wordpress.com

১৯৯২ সালের কথা। অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ তাদের ইয়ুথ একাডেমী ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সম্ভবত এই সিদ্ধান্তের সাথে সাথে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ পৃথিবীতে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কেননা তাদের ইয়ুথ একাডেমীতে ছিল সর্বকালের অন্যতম সেরা স্প্যানিশ ফুটবলার এবং রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তী রাউল গঞ্জালেজ! এমন হীরের টুকরো হাতে পেয়েও কেউ এভাবে ছেড়ে দিতে পারে? হ্যাঁ, দলটা যদি অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ হয়, তাহলে এমন বোকামি সম্ভব।

তবে ভুল বুঝতে তাদের বেশিদিন সময় লাগেনি। সেই বছরই রিয়ালের যুব একাডেমীতে নাম লেখান রাউল। আর মাত্র দুই বছরের ব্যবধানেই নিজের প্রতিভার গুণে রিয়ালের প্রথম সারির দলে সুযোগ পান তিনি। আর কি দারুণভাবেই না নিজের প্রতি অবহেলার প্রতিশোধ নিলেন তিনি। ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে মাদ্রিদ ডার্বিতে নিজের মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামেন রাউল। তখনো পর্যন্ত রিয়ালের হয়ে গোলের খাতা খোলা হয়নি এই ফুটবল গ্রেটের। কিন্তু নিজের পূর্ববর্তী ক্লাবকে সামনে পেয়েই যেন তেতে উঠলেন তিনি। আর তার জোড়া গোলে চোখ খোলে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের। রাউলের মতো এরকম মধুর প্রতিশোধ আর কয়জনই বা নিতে পেরেছেন? ক্যারিয়ারের প্রথম গোলটি যদি হয় নিজের পূর্বতন ক্লাবের বিপক্ষে যারা কিনা প্রতিভার বিচার না করে হেলায় বেচে দিয়েছিল অন্য ক্লাবের কাছে, তাহলে এর চেয়ে মধুর প্রতিশোধ আর কি হতে পারে?

৪) অ্যাতলেটিকোর ১৪ বছরের হুডুর সমাপ্তি

প্রিমিয়ার ডিভিশন জয় উদযাপন করছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ; ছবিসূত্রঃ skysports.com

রিয়ালের সাথে ডার্বি হারগুলো অ্যাতলেটিকোকে কতটা পীড়া দিত তার প্রমাণ পাওয়া যায় ২০০০ সালের দিকে তাদের দলীয় শ্লোগান থেকে। তখন তাদের ঘিরে সমালোচনা এতোটাই বেড়েছে যে তারা নিজেদের শতবার্ষিক উৎসব উদযাপন করা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পরে অ্যাতলেটিকো তাদের দলীয় শ্লোগান বের করে- “তুমি সবসময় যা চাও তা পেতে পারো না (You can’t get always what you want)।

অবশেষে অ্যাতলেটিকোর দুঃখ দূর করতে ম্যানেজার হয়ে আসেন ডিয়েগো সিমিয়নে। তার অনুপ্রেরণায় ১৪ বছর পর রিয়ালের ২৩ ম্যাচের ডার্বি জয়রথ থামায় অ্যাতলেটিকো। ১৯৯৯ সালের পর ২০১৩ সালে আবার মাদ্রিদ ডার্বি জয় করে তারা। সেবার মাদ্রিদ ডার্বির প্রথম লেগে রিয়ালকে ১-০ গোলে হারায় রোজি ব্লাঙ্কোসরা। পরের লেগে ড্র করলেও তা অ্যাতলেটিকোর জন্য ছিল জয়ের সমতুল্যই। কেননা ওই ম্যাচটি জিতে গেলে লস ব্লাঙ্কোসরা শিরোপা দৌড়ে অ্যাতলেটিকোর চেয়ে এগিয়ে যেত। তবে  গুরুত্বের বিচারে অ্যাতলেটিকোর লা লীগা জয়ের চেয়েও যেন বেশি স্বস্তিদায়ক ছিল তাদের ওই ডার্বি জয়। কেননা একটি জয় যে এসেছিল ১৪ বছরের ক্ষতের উপশম হয়ে!

৫) সার্জিও রামোস এবং রিয়ালের লা ডেসিমা

রিয়ালের লা ডেসিমা জয় উদযাপন; ছবিসূত্রঃ www.espn.in

১২ বছর পর ২০১৩-১৪ মৌসুমে ইউরোপিয়ান ক্লাব শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা আবার ঘরে তোলে লস ব্লাঙ্কোসরা। আর সেই শিরোপা জয়টাও কত চমৎকার ভাবেই না আসে। আগের বছরই যাদের কাছে ডার্বি হেরে ঘরোয়া লীগে তৃতীয় অবস্থানে থেকে শেষ হয় সেই অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদকেই হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লীগের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জয় করে রিয়াল মাদ্রিদ! তবে সব কিছু ছাপিয়ে জয়ের ধরণে যোগ হওয়া নাটকীয়তাই ম্যাচটিকে করে তুলেছিল ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ।

ম্যাচের শুরুতেই ডিয়েগো গোডিন এর গোলে এগিয়ে যায় অ্যাতলেটিকো। অ্যাতলেটিকোর জন্য সব কিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিল। যে গোডিনের গোলে বার্সাকে হারিয়ে তারা আগের মৌসুমে জয় করেছিল লা লীগা, সেই গোডিনই ম্যাচের উদ্বোধনী গোল করায় মনোবল যেন বহুগুণে বেড়ে যায় রোজি ব্লাঙ্কোসদের। আরও একটি ডার্বি জয়ের স্বপ্নই যেন দেখতে শুরু করে তারা। কিন্তু তখনই দৃশ্যপটে গ্লাডিয়েটর রামোস!

ইতিহাস বলে রোমান গ্লাডিয়েটররা রক্তের শেষ বিন্দু দেহে থাকা পর্যন্ত লড়াই করে যেত। সেদিন রামোস লিখেছিলেন এমনই এক গৌরবময় উপাখ্যান যার মহত্ব বলে বোঝানো যায় না। ম্যাচ শেষ হতে যখন আর মাত্র কয়েক মুহূর্ত  বাকি, রিয়াল তখনও পিছিয়ে সেই শুরুর এক গোলেই। অ্যাতলেটিকোর খেলোয়াড়রা তখন সময় শেষ করার অপেক্ষায় আর সমর্থকরা প্রস্তুত হচ্ছিল জয় উদযাপনের। রিয়ালের খেলোয়াড়রা ততক্ষণে পরাজয়ের বিস্বাদ অনুভব করতে শুরু করেছে হয়তো। কেবল রামোস বাদে! কারণ তিনি যে তখনো বিশ্বাস করতেন জয় তাদেরই হবে। আর এই বিশ্বাসকে বাস্তবে রূপ দিয়ে ৯৩  মিনিটে তার দুর্দান্ত হেডারে ম্যাচে অবিশ্বাস্যভাবে সমতায় ফেরে রিয়াল। ম্যাচ ইনজুরি সময়ে গড়ালে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ আর ঘুড়ে দাঁড়াতে পারেনি। বেল, মার্সেলো আর রোনালদো জাল খুঁজে পেলে ৪-১ ব্যবধানের বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে রিয়াল। লা দেসিমা জয়ের এই ম্যাচ হয়তো সময়ের সাথে ভুলে যাবে সবাই, কিন্তু সার্জিও রামোসের সেই মোড় ঘুরিয়ে দেয়া গোলটির কথা কি ভোলা সম্ভব? অন্তত অ্যাতলেটিকো সমর্থকদের পক্ষে সম্ভব না।

তথ্যসূত্রঃ

১)  bleacherreport.com/articles/2194852-5-classic-real-madrid-atletico-madrid-derby-moments

২) en.wikipedia.org/wiki/Madrid_Derby

৩) metro.co.uk/2016/05/28/real-madrid-v-atletico-madrid-five-classic-moments-in-madrid-derby-history-5909402/

৪) enforex.com/culture/madrid-derby-real-vs-atletico.html

৫) reddit.com/r/atletico/comments/489c8z/history_when_cybele_was_atleticos_and_neptune_was/

৬) fussball.wettpoint.com/en/h2h/757-1668.html

Related Articles