Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মনের ভাঙনে ভাঙিয়া গেছে ঘর

খুব সম্ভবত ইংল্যান্ড সিরিজের কথা। সময় খুব ভালো যাচ্ছে বাংলাদেশ দলের। অনুশীলনেও সবার মাঝে সুখী সুখী ভাব। ক্লান্তির শেষে শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ডাগআউটে বিশাল ছাতার নিচে পাশাপাশি বসে আড্ডায় মগ্ন মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হাসিঠাট্টায় শান্তি শান্তি ভাব। পরদিনই ঠিক এই দৃশ্যটায় প্রায় সব পত্রিকার কাভারেজ মাতালো। পঞ্চপাণ্ডবের ব্যাটিংয়ের চার পাণ্ডবের তিনজনকেই যখন এক ফ্রেমে রাখা যায়, তার চাইতে সুখকর আর কী হতে পারে!

কিন্তু দলের সেই সুখের ঘরে ভাঙ্গন ধরেছে। ভাঙ্গন ধরেছে সিনিয়র ক্রিকেটারদের মাঝেই। আরও ছোট করে বলতে গেলে, অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা একাদশ নির্বাচনে সাকিব-মুশফিকদের কাছ থেকে বরাবরই পরামর্শ নেন। কিন্তু মাহমুদউল্লাহকে বিশ্বকাপের এক ম্যাচে বসিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন সাকিব। মাশরাফি তা মানেননি, মাঠে নামিয়েছেন ব্যাটিং অলরাউন্ডারকে। এই খবর কোনোভাবে কানে গেছে মাহমুদউল্লাহর। সেই থেকেই শুরু।

সাকিবের সাথে উদযাপনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ; Image Source: BCB

বিশ্বকাপ শেষে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জানা গেছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহর ৪১ বলে করা ২৮ রানের ইনিংসের পরই ড্রেসিংরুমে ‘ঝামেলা’র উৎপত্তি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে পরের ম্যাচে মাহমুদউল্লাহকে বসিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু অধিনায়ক সেই কথা রাখেননি। তারপর থেকে সাকিব নিজেকে টিম প্ল্যানের বাইরে রাখেন।

সেই সত্যতাও মিলে যায় দুয়ে-দুয়ে চার করে। সংবাদ সম্মেলনে পারফরম্যান্স এবং একাদশ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সাকিব বলেছিলেন,

আমি কিছু জানি না, অধিনায়ক এবং কোচকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

সাকিবের এহেন মন্তব্য যে নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা হতাশাকেই বের করে এনেছেন তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ঘটনা নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক সদস্য বলেছেন,

সাকিবের মতে, বিশ্বকাপের তৃতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহ নিজের নামের সাথে সুবিচার করতে পারেননি। জয়ের জন্য যখন ২০ ওভারে ১২০ রান প্রয়োজন, তখন মাহমুদউল্লাহ ওই পরিস্থিতিতে ৪১ বল খেলে শম্ভুকগতিতে ২১ রান তোলেন। ড্রেসিংরুমের সবাই বিশ্বাস করেছিল, এই রান চেজ করা সম্ভব। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিং দেখে মনে হয়নি তিনি সেই চেষ্টা করেছেন। সাকিব এটাকে ভালো চোখে নেয়নি।

মন্দ কথা বাতাসের আগে যায়। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাকিবের ভাবনা মাহমুদউল্লাহর কানে যেতে সময় লাগেনি। এরপর বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় ইনিংস খেলেন। সেখানেও বিপত্তি। এমন ইনিংস খেলার পরও কেন সতীর্থরা তাকে তালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়নি, তা নিয়ে ড্রেসিংরুমে ঢুকে ক্ষেপেছিলেন ৩৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার। শোনা যায় তিনি নাকি বলেছিলেন,

‘এই ইনিংস দেখে কি একটু তালিও দেওয়া যায় না? সব তালি কি বড় ব্যাটসম্যানের জন্য?’ এই বলে ব্যাটও ছুঁড়ে মেরেছিলেন।

মাহমুদউল্লাহর সময়টা ভালো যাচ্ছে না। কাঁধের ইনজুরিতে বল করতে পারেননি পুরো বিশ্বকাপজুড়ে। এর মধ্যে বিশ্বকাপে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেছেন। কারণ হিসেবে তার যুক্তি, প্রস্তুতিতে যেন কোনো রকমের ভাটা না পড়ে তাই এমনটা করা। শুধু তা-ই নয়, নিজের ছয় নম্বর ব্যাটিং পজিশন নিয়েও তিনি সন্তুষ্ট নন। নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী, উপরের পজিশনে ব্যাট করার সামর্থ্য থাকলেও নিচের দিকে ব্যাট করতে হচ্ছে; এ নিয়ে অতৃপ্তি আছে তার। সবমিলিয়েই বিশ্বকাপে মানসিকভাবে খুব ভালো ছিলেন না বাংলাদেশের হয়ে ১৮৪ ম্যাচে ৩,৯৮৫ রান সংগ্রহ করা এই ক্রিকেটার।

বিশ্বকাপে এটি ছিল মাহমুদউল্লাহর সাধারণ চিত্র; Image Source: AP

তারপরও যে বিশ্বকাপটা মাহমুদউল্লাহর খুব গেছে তা-ও নয়। পরিসংখ্যান বলছে, সাকিব-তামিমদের চেয়ে খুব পিছিয়ে নয় তিনি। যদিও পুরো টুর্নামেন্টে সাকিব আল হাসানই ছিলে দলের ব্যাটিং নেপথ্যে। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় মাহমুদউল্লাহর নাম রয়েছে চার নম্বরে। সাকিব, মুশফিক ও তামিম যেখানে যথাক্রমে ৬০৬, ৩৬৭ এবং ২৩৫ রান তুলেছেন, মাহমুদউল্লাহর সংগ্রহ সেখানে ২১৯ রান। প্রথম তিনজন ৮ ম্যাচ খেলেছেন, মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন ৭ ম্যাচ। তবে স্ট্রাইক রেটে তামিমকে পেছনে ফেলেছেন তিনি। ৪৩.৮০ গড়ে ব্যাট করা মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৯.৭৫। হয়তো কাঁধের চোট না থাকলে, বল হাতেও কিছু করে দেখাতে পারতেন ডানহাতি এই ক্রিকেটার।

হ্যাঁ, এ কথা সত্যি যে দলের প্রয়োজনে বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তাকে বলা হয় পর্দার আড়ালের নায়ক। বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহই কাণ্ডারি। সে কারণেই কি না, সব বুঝেও ম্যানেজমেন্ট তার ব্যাটিং পজিশন উপরের দিকে আনতে চায় না। পাশাপাশি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোতে মাহমুদউল্লাহর অতীত সাফল্য এবারের বিশ্বকাপেও প্রত্যাশার পারদ বাড়িয়ে দিয়েছিল অনেকখানি। সবকিছু মিলিয়েই বিশ্বকাপটা ভালো কাটেনি মাহমুদউল্লাহর।

দেশে ফিরে যখন শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য দল প্রস্তুত হচ্ছে, তখন শোনা যাচ্ছিল এই সফরে বিশ্রামে থাকবেন মাহমুদউল্লাহ। এর পিছনে মূল কারণ তার কাঁধের ইনজুরি। টিয়ার-২ গ্রেডের ইনজুরি থেকে বেঁচে ফিরতে অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি নেই। কিন্তু সাকিব, লিটনের অনুপস্থিতিতে মাহমুদউল্লাহর বিশ্রামের সুযোগ বাদ দিতে হলো। এই সুযোগটা মাহমুদউল্লাহর জন্য একরকম ‘লাইফলাইন’ হিসেবে কাজ করতে পারতো। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি পঞ্চপাণ্ডবের একজন। আবারও হতাশ করেছেন।

মাহমুদউল্লাহর আবেদন; Image Source: Getty Image

কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে এরই মধ্যে ২-০ তে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। বাকি শুধু নিয়মরক্ষার ম্যাচ। তবে দুই ম্যাচেই যথাক্রমে ৩ ও ৬ রানে সাজঘরে ফিরেছেন। এক ম্যাচে হাত ঘুরিয়েছিলেন, কোনো উইকেট পাননি। তবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে তার সামনে দারুণ সুযোগ ছিল। ১৫ ওভারে যখন ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ে ধুঁকছে, তখন দলকে সামনের দিকে টেনে নেওয়ার পুরো সুযোগটাই ছিল মাহমুদউল্লাহর সামনে। তিনি তা পারেননি। অনেক বেশি মারকুটে হয়ে খেলতে গিয়ে আকিলা ধনঞ্জয়ার হাতে উইকেট বিলিয়ে ফিরেছেন।

সাকিব, মুশফিক, তামিম, মাশরাফির সঙ্গে উচ্চারিত হয় মাহমুদউল্লাহর নাম। কিন্তু খাতা-কলমে অন্যদের মতো সফল হতে পারেননি তিনি। সাকিব, তামিম ও মুশফিক; তিনজনই যখন ৬০০০ ওয়ানডে রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছে, তখনও ৪ হাজার রান পূরণ করতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। যদিও এর পেছনে মূল কারণ তার ব্যাটিং পজিশন। সঙ্গে রয়েছে অন্যান্যদের চেয়ে কম ম্যাচে সুযোগ পাওয়া। বল হাতে এখন পর্যন্ত ১৮৪ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ৭৬ উইকেট। পর্যাপ্ত সুযোগ থাকার পরও এখানে নিজেকে রাঙাতে না পারার পুরো দায়ই মাহমুদউল্লাহর নিজের।

মুশফিকের সাথে বড় জুটির পথে; Image Source: AFP

এশিয়ার সব দলগুলোর মধ্যে ভাঙনের সুর শোনা গেলেও, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। ভ্রাতৃত্ববোধ আর শৃঙ্খলায় অনুসরণীয় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। তার মধ্যেও কখনও কখনও ঘটে যায় ছোটখাট ঘটনা। কিন্তু জ্যেষ্ঠ ক্রিকেটারদের মধ্যে এহেন বোঝাপড়ার অভাব অনেকটা ‘প্রভাব বিস্তার’ করা নিয়ে এলাকার গণ্ডগোল করার মতোই। সেই প্রভাব বিস্তারে শুধু দলেরই ক্ষতি নয়, মানসিক চাপের কারণে প্রভাব পড়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও। শুধু তা-ই নয়, তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এই ধরনের ঘটনা আগামীতে বড় ঘটনা ঘটাতে ‘উদ্বুদ্ধ’ করবে।

তাই অনুসরণীয় হয়ে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে ভাঙনের সুর না বাজুক, ভাঙনে না ভাঙুক সুখের ঘর।

This is an article based on Mahmudullah Riyad and his recent performance in the team. He is not doing his best for the team because of off-form.

Feature Photo: BCB

Related Articles