Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নিপুণ দেবনাথ- অক্ষর থেকে অবয়ব তৈরির কারিগর

একবার একটি ফেসবুক পেজ নীচের এই ছবিটি পোস্ট দিয়ে বলে, সত্যজিৎ রায়ের হাতে অক্ষরের মাধ্যমে কত চমৎকারভাবে প্রকৃতি ফুটে ওঠেছে। মানুষ, ঘুড়ি, নৌকা, গাছ, হাঁস ইত্যাদি সবগুলোকে জিনিস নিজেদের নামের অক্ষর দিয়ে ফুটে ওঠেছে। সকলে সত্যজিৎ রায়ের ছবি দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয় (কমেন্টে) এবং বাহবা দিতে থাকে (লাইকে)। এ ধরনের আঁকাআঁকির জন্য সত্যজিৎ রায় অনেক বিখ্যাত। কিন্তু সেই ছবি সত্যজিৎ রায়ের ছিলো না, ছবির মূল শিল্পী ছিল ‘নিপুণ দেবনাথ’ নামে একজন তরুণ। আঁকাআঁকি তার পেশা নয়, শখের বশে মাঝে মাঝে আঁকে। পরবর্তীতে যখন সত্যটি জানা হলো, ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেছে। ফেসবুকের অন্যান্য অনেক পেজ একই ছবি সত্যজিৎ রায়ের বলে পোস্ট করতে থাকে। এভাবে গণহারে ছড়িয়ে গেলে সেটাকে তো আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

তবে আর যা-ই হোক, এর মাধ্যমে তরুণ আর্টিস্ট নিপুণ দেবনাথের মুনশিয়ানার পরিচয় ঠিকই পাওয়া যায়। কেমন বাঘা আঁকিয়ে হলে এক তরুণের ছবি সত্যজিৎ রায়ের ছবি বলে চালিয়ে দেয়া যায় তা বুদ্ধিমান পাঠক মাত্রই বুঝতে পারবে। সেই নিপুণ দেবনাথ এবং তার চিত্রকর্ম নিয়ে আজকের আয়োজন।

নিপুণ দেবনাথ পড়াশোনা করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছেন। পড়াশোনা বিজ্ঞানের টেকনিক্যাল দিকে হলেও শখ আঁকাআঁকি করা। মন পড়ে থাকে আঁকাআঁকিতে। ব্যস্ততা ও কাজের ফাঁকে যখন প্রিয় এই আঁকাআঁকিতে মনোনিবেশ করেন, তখন মনে হয় এক টুকরো প্রশান্তি এসে ভর করেছে মনে। এমন এক প্রশান্তি যা অর্থ কিংবা অন্য কোনো প্রাপ্তি এনে দিতে পারে না।

এখানে তার কিছু শিল্পকর্মের সাথে আমরা পরিচয় হবো। ‘চিত্রলেখা’ নামে তার কতগুলো ছবির সংগ্রহ আছে। এই ছবিগুলোর মধ্যে বাংলা বর্ণ ও শব্দ দিয়ে বর্ণ ও শব্দ সংশ্লিষ্ট বস্তু চিত্রিত হয়। নীচের ছবিগুলো লক্ষ্য করা যাক।

রিক্সা, সাইকেল, টেম্পু, ট্যাক্সি

পাখি, ফুল, বই, ভাল্লুক, মই

গিটার

কাজী নজরুল ইসলাম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

শহীদ মিনার

সৈন্য, নৌকা, ঘোড়া, হাতি, মন্ত্রী, রাজা (লম্বালম্বি করে লেখা। ছবিটিকে মনে মনে ৯০ ডিগ্রী কোণে ঘুরিয়ে নিতে হবে।)

ঋষি, একতারা, ঐরাবত, ওজন, ঔষধ

কলম, খরগোশ, গাড়ি, ঘড়ি, ব্যাঙ

হুমায়ুন আহমেদ

তার আঁকাআঁকি ও অন্যান্য দিক নিয়ে তার সাথে কথা বলেছেন সিরাজাম মুনির শ্রাবণ। কথোপকথনের কিছু তুলে দেয়া হলো রোয়ার বাংলার পাঠকের জন্য।

শ্রাবণ: কেমন আছেন?

নিপুণ: এই তো ভালো, আপনি?

শ্রাবণ: আমিও ভালো। ফেসবুকের একটা পেজ আপনার ছবিকে সত্যজিৎ রায়ের শিল্পকর্ম বলে চালিয়েছিল। ঐ পোস্টের লিংকটা কি আছে? বা কোনো স্ক্রিনশট?

নিপুণ: খুব সম্ভবত একজন ভদ্রলোক প্রথমে ছবিটা সত্যজিৎ রায়ের বলে শেয়ার করেন। পরে সেখান থেকে বিভিন্ন পেজে ছড়িয়ে যায়। আমি ওভাবে কোনো লিংক বা স্ক্রিনশট রাখিনি। তবে ঐ ভদ্রলোকের সাথে পরে আমার কথা হয়েছিল। উনি উনার ভুল স্বীকার করে পরে পোস্টটি সরিয়ে নেন।

শ্রাবণ: আপনার চিত্রকর্মগুলোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অক্ষর দিয়ে অবয়ব কিংবা দৃশ্যপট ফুটিয়ে তুলেন। চিত্রকলায় এধরনের আর্টের কি বিশেষ কোনো নাম বা ক্যাটাগরি আছে?

নিপুণ: সামগ্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ ধরনের আর্ট ‘ক্যালিগ্রাফি’ ক্যাটাগরিতে পড়ে। যেকোনো লেখাকে সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলাকেই ক্যালিগ্রাফি (Calligraphy) বলে। ক্যালিগ্রাফির একটা বিশেষ অংশ হলো ‘ক্যালিগ্রাম’। ক্যালিগ্রামে একটি শব্দ বা বাক্য দিয়ে একটি ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়। আমার আঁকাগুলো ক্যালিগ্রাম শ্রেণীতে পড়ে। এখানে আমার “চিত্রলেখা” অ্যালবামের ছবিগুলোর কথা বলছি। বাকিগুলো অন্যান্য শ্রেণীতে পড়ে।

নিপুণ দেবনাথের ক্যালিগ্রাফে ফুটে ওঠেছে ‘ঈদ মোবারক’।

শ্রাবণ: ক্যলিগ্রামের বাইরে আর কোন কোন শ্রেণীর আর্ট আপনি করেন? মানে কোন কোন ফিল্ডে আপনার স্বাচ্ছন্দ্য আছে? কোন কোন ফিল্ডে আগ্রহ পান?

নিপুণ: আমি অ্যাম্বিগ্রাম নিয়ে কাজ করতে খুব পছন্দ করি। প্রচলিত ‘১৮০ ডিগ্রী রোটেশনাল অ্যাম্বিগ্রাম’-এর পাশাপাশি ‘ফিগার গ্রাউন্ড’ ও ‘ওয়েব অ্যাম্বিগ্রাম’ নিয়ে কাজ করি। মূলত আমি বাক্য আর শব্দ নিয়ে খেলতে পছন্দ করি। আমার কিছু চিত্র আছে, সেগুলা কোন শ্রেণীতে পড়ে আমি নিজেও জানি না। তাই আমি ওগুলার নাম দিয়েছি ‘কাকের ঠ্যাং আর বকের ঠ্যাং’। আর তাছাড়া পেন্সিল স্কেচ করতে খুবই পছন্দ করি।

শ্রাবণ: অক্ষর দিয়ে ছবি আঁকার এই বিশেষ কৌশলটি কীভাবে আয়ত্ত করেছিলেন? কোনো ব্যক্তি, কোনো ঘটনা বা অন্য কোনোকিছু কি ছিল আপনার অনুপ্রেরণার পেছনে? আমাদের সাথে শেয়ার করবেন কি?

নিপুণ: এ ধরনের আঁকাআঁকির অনুপ্রেরণা কোনো প্রখ্যাত চিত্রশিল্পীর কাছ থেকে পাইনি। পেয়েছি এমন একজনের কাছ থেকে যার চিন্তা-ভাবনা, ক্রিয়েটিভিটি আমাকে সবসময়েই মুগ্ধ করে। উনি হলেন সুকুমার রায়। খুব ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের বইয়ে দেখেছিলাম উনি স্বরবর্ণগুলোকে একজন ছাতা হাতের মানুষের আদলে এঁকেছিলেন। সেটা অবশ্য সেই ছোটবেলার কথা। আমার অনেকদিন ধরেই ইচ্ছে ছিল এরকম কিছু একটা করার। মাঝে মাঝে টুকটাক করতাম, কিন্তু কখনো এগুলাকে যত্ন নিয়ে করিনি। মানে সংগ্রহ করে রাখিনি। ২০১৫ সাল থেকে প্রথম এগুলোকে যত্ন নিয়ে আঁকা শুরু করি।

আর তাছাড়া, আমার ক্যালিগ্রাফির পিছনে আমার বাবার অনেক বড় অবদান আছে। ছোটবেলা থেকে বাবার হাতের লিখার উপর হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অক্ষর লিখা শিখেছি। তখন থেকেই বাবা হাতের লিখা সুন্দর করার উপর প্রচন্ড গুরুত্ব দিতেন। সেটার পরবর্তীতে ক্যালিগ্রাফির দিকে আমাকে প্রভাবিত করেছিল।

শ্রাবণ: সুকুমার রায়ের ঐ ছবিটা কি আপনার সংগ্রহে আছে? বিশেষ এই ছবিটি দেখতে চাই।

নিপুণ: সুকুমার রায়ের রচনাসমগ্রেই পাবেন। আমার কাছে এখন নেই। দেশে আমার বাসায় আছে।

শ্রাবণ: কবে থেকে আপনার আঁকাআঁকির হাত? শুরুর গল্পটা যদি বলতেন…

নিপুণ: কোনটা বলবো? সামগ্রিক ছবি আঁকাআঁকি, নাকি শুধু ক্যালিগ্রাম নিয়ে বলবো?

শ্রাবণ: দুটোই বলুন। দুটোই শুনতে চাই।

নিপুণ: আমি এমনিতে আঁকাআঁকি করি সেই ছোটবেলা থেকেই। আমার অবসর সময়ের সঙ্গীই ছিল কাগজ আর পেন্সিল। ছোটবেলার আঁকাগুলো বেশ গতানুগতিক ছিল। এই যেমন, জলরং আর গ্রামের দৃশ্য। ভার্সিটির ২য় বর্ষ থেকে একটু ভিন্নধর্মী আঁকা শুরু করি। ক্যারিক্যাচার, রিয়েলেস্টিক স্কেচ, পোর্টেইট এসব।

ক্যালিগ্রাম শুরু গল্পটা ২০১৫ সালে। প্রথম একদিন কেন জানি ‘গরু’ লিখতে গিয়ে মনে হলো ‘গরু’ শব্দটা দেখতে আদতে গরুরই মতো। তারপর ফেব্রুয়ারি মাস এলো। ২১শে ফেব্রুয়ারি সামনে ছিল। তখন ‘বাংলাদেশ’ শব্দটি নিয়ে কাজ করি। ‘বাংলাদেশ’ কথাটির মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্র আর পতাকা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।

গরু

Bangladesh শব্দটির মাঝে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের মানচিত্র।

শ্রাবণ: অক্ষরগুলোকে বিশেষভাবে সাজিয়ে চেহারা, বস্তু, বা অন্যান্য কিছু তৈরি করে ফেলেন। অক্ষর ঠিক রেখে এরকম ফিগার তৈরি করার ব্যাপারটা তো বেশ কঠিন লাগে আমার কাছে। এটার প্রক্রিয়া ঠিক কীভাবে সম্পন্ন হয়? মনে হয় অবয়ব ঠিক থাকলে অক্ষর ঠিক থাকবে না, আর অক্ষর ঠিক থাকলে চেহারা ঠিক থাকবে না! কিন্তু আপনি দক্ষ হাতে তা সাবলীলভাবে করছেন। কীভাবে?

নিপুণ: আসলে আমি জানি না, কোনো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলা করা যায় কিনা। কোনোদিন আমি ব্যাপারটা ধরতে পারলে অবশ্যই এটা নিয়ে একটা বই লিখবো। যা-ই হোক, আমি যখন কাজ শুরু করি তখন অক্ষরগুলোর মধ্যে ছবিগুলো কল্পনা করি। আমি যখন ‘ঈ’ কে দেখি, আমার কাছে সত্যিই একে ‘ঈগল-এর মতো মনে হয়। অন্যদের এমন লাগে কিনা জানি না।

তবে হ্যাঁ, অনেকসময় ছবির বিষয়বস্তু ঠিক রেখে অক্ষরগুলোকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা কষ্টকর। অনেকসময়েই ছবি আর লেখা দুটোর ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। এটা করতে হয় প্রচুর ট্রায়াল এন্ড এরোর-এর মাধ্যমে। আমি একটা কাজ শেষ করে নিজে যাচাই করার চেষ্টা করি। দেখি লেখা আর ছবি দুটোই ভালোভাবে বোঝা যায় কিনা। তারপর যাচাইয়ের জন্য বন্ধুদের দেখাই।

চিত্র: ঈগলের উদাহরণটি আছে এখানে।

শ্রাবণ: আর্টের বিশেষ দিক অ্যাম্বিগ্রাম নিয়ে যদি কিছু বলতেন… অ্যাম্বিগ্রাম কী, এ নিয়ে কেতাবি কথা। অ্যাম্বিগ্রাম নিয়ে আপনার কাজ, কেমন মজা পান সেসব। এই জগতে আপনার পদচারণা সম্পর্কে কিছু যদি আমাদের সাথে শেয়ার করতেন…

নিপুণ: অ্যাম্বিগ্রাম হলো এমন একধরনের শব্দ বা শব্দগুচ্ছ, যাকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখলে এর মধ্যে হুবহু এক বা সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ বা ভাব প্রকাশিত হয়। সবচেয়ে প্রচলিত অ্যাম্বিগ্রাম হলো ১৮০ ডিগ্রী রোটেশনাল অ্যাম্বিগ্রাম। এধরনের অ্যাম্বিগ্রামে কোনো লেখাকে উল্টিয়ে ফেললে বা ১৮০ ডিগ্রী কোণে ঘুরালেও লেখা হুবহু একই থাকে। নীচের ছবিটায় ‘অপার্থিব’ শব্দটি ১৮০ ডিগ্রী রোটেশনে লেখা আছে। উল্টিয়ে দেখলেও একইরকম দেখায়।

আর নীচের এই ছবিটি দ্বিভাষী অ্যাম্বিগ্রাম (Bilingual Ambigram)-এর উদাহরণ। এধরনের অ্যামবিগ্রামে একই শব্দ দুটো ভিন্ন ভাষার লেখা থাকে। এখানে ইংরেজি শব্দ ‘ambigram’ এবং বাংলা শব্দ ‘অ্যাম্বিগ্রাম’ একসাথে লেখা আছে।

আরেক ধরনের অ্যামবিগ্রাম হলো ফিগার গ্রাউন্ড অ্যামবিগ্রাম (Figure Ground Ambigram)। এতে একটি শব্দের মাঝে থাকা ফাঁকা অংশটুকুতে আরেকটি শব্দ লেখা থাকে। আমি একটা কাজ শুরু করেছিলাম ‘বিপ্রতীপ’ নাম দিয়ে। উদ্দেশ্য ছিল, কিছু বিপরীত জিনিস ফিগার গ্রাউন্ড অ্যামবিগ্রামের মাধ্যমে প্রকাশ করা।

কালো-সাদা

আলো-আঁধার

উঁচু-নিচু

এটা হলো শিকল বা Chain Ambigram। এ ধরনের অ্যামবিগ্রামে একটার পর একটা লেখা শিকলের কড়ার মতো করে সজ্জিত থাকে।

এটা হলো জাল বা Web Ambigram। এখানে ‘অন্তহীন’ শব্দটি ডানে বাঁয়ে উপরে নীচে আছে। চাইলে এটিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত করা যাবে। এই ছবিটিকে উল্টো করলে বা ১৮০ ডিগ্রী কোণে ঘুরালেও লেখাটা অবিকল একইরকম থাকবে।

আরেক ধরনের প্রচলিত অ্যাম্বিগ্রাম হলো সিমবায়োটোগ্রাম বা Symbiotogram। এতে দুটো ভিন্ন শব্দ একইসাথে লিখা থাকে।

শ্রাবণ: আঁকাআঁকি করার জন্য মাধ্যম হিসেবে কী ব্যবহার করেন?

নিপুণ: খাতা-কলমে আঁকতেই সবচেয়ে বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তবে বেশিরভাগ আঁকাই শেষ পর্যন্ত ইলাস্ট্রেটরে আর ফটোশপে এডিট করি।

শ্রাবণ: আপনার পড়াশোনা?

আমি বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছি ২০১২ সালে। এখন মিসৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টে মাস্টার্স করছি।

শ্রাবণ: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। প্রকৌশলের ছাত্র কিংবা পরবর্তীতে প্রকৌশলী হয়েও চিত্রকলার দিকটা কীভাবে ম্যানেজ করেছেন?

নিপুণ: ছবি আঁকা আমার শখের কাজ। সেই ছোটবেলা থেকেই। পড়াশোনা বা কর্মক্ষেত্রে কাজ করার পাশাপাশি অনেক কিছুই করা যায়। মূলত ইচ্ছা থাকলে সময় বের করা কঠিন কিছু না।

শ্রাবণ: মার্কিন মুলুকে ব্যস্ত আছেন। তারপরেও শখের কাজটা অল্প অল্প করে করে যাচ্ছেন, এটা আসলেই প্রশংসার দাবী রাখে।

নিপুণ: Thanks। আসলে সত্যি কথা বলতে এই শখের কাজগুলোই ব্যস্ততার ক্লান্তিগুলোকে ভুলিয়ে রাখে।

চিত্র: যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপুণ দেবনাথ।

শ্রাবণ: আপনার বেশিরভাগ চিত্রই তো বাংলায়। দূরে ইংরেজির দেশে থেকে বাংলায় এই কাজগুলো আপনাকে কতটা প্রশান্তি দেয়? সামান্য পরিমাণ কি আমাদের জন্য ভাষায় প্রকাশ করা যায়?

নিপুণ: আসলে বাংলায় লিখতে পারাটা কতটা প্রশান্তি দেয় সেটা বলে বোঝানো যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই যেহেতু ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা, তাই তখন থেকেই ওভাবে ঘটা করে বাংলা লিখা হয় না। আমার মাঝেমধ্যেই বাংলা লিখার প্রচণ্ড ইচ্ছা হয়। তাই তখন থেকেই ক্লাসের নোটের ফাঁকে বা সামান্য কাগজ কলম পেলে বাংলায় দুই-এক লাইন করে লিখি। বাংলা অক্ষরগুলোর মাঝে একধরনের নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। এদের মধ্যে নিজ থেকেই চিত্র লুকিয়ে আছে যেন। আপনার ‘চন্দ্রবিন্দু’ দেখলে বাঁকা চাঁদ (চন্দ্র) আর একটা বিন্দু চোখে পড়বেই।

শ্রাবণ: নবীন যারা অক্ষর শিল্পী হতে চায়, যারা অ্যাম্বিগ্রাম শিল্পী হতে চায়, যারা রেখা শিল্পী (ক্যালিগ্রাফি) হতে চায় তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

নিপুণ: আমার মূল উপদেশ হবে নিজের মধ্যে একটা সৌন্দর্য্যবোধ তৈরি করা আর সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা করা। সৌন্দর্য্যবোধ তৈরি করতে হবে, কারণ যেকোনো শিল্পীকেই নিজে যাচাই করতে হয় তার কাজটি কতটুকু সুন্দর হলো। কাজটি আরো সুন্দর করা যায় কিনা তার চেষ্টাটা থাকতে হবে। আর সৃজনশীল চিন্তা করতে হবে, কারণ এ ধরনের শিল্পের প্রত্যেকটা কাজই হতে হবে অদ্বিতীয়।

যে উপদেশগুলো বললাম সেগুলো আসলে বলা সহজ। কিন্তু একজন কীভাবে সৌন্দর্য্যবোধ তৈরি করবে কিংবা সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করবে তার দিক-নির্দেশনা দেয়া কঠিন। সেক্ষেত্রে আমি শুধু এটুকু বলবো- প্রচুর পরিমাণে ভালো ভালো কাজ দেখা, পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং অনুধাবন করা। ঠিক কী কী কারণে একটি শিল্পকর্ম আপনার ভালো লাগলো সেগুলো খুঁজে বের করা। পরে নিজের কাজে সেগুলো প্রয়োগ করা।

শ্রাবণ: আপনার চিত্রজীবনে ঘটেছে এমন মজার বা উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা আছে কি?

নিপুণ: আমি যখন ‘চিত্রলেখা’ সিরিজের কাজ শুরু করি, তখন আমার কোনো ধারণাই ছিল না এগুলো কোন শিল্পের মধ্যে পড়ে, এগুলোর কোনো বিশেষ নাম আছে কিনা। আমার কোনো তাত্ত্বিক পড়াশোনা নেই এসবের উপর। একদিন একজন লোক আমাকে ফেসবুকে নক করে বললো আমার করা ক্যালিগ্রামগুলো তার অনেক ভালো লাগে। আমি তখন ক্যালিগ্রাম নামটা প্রথম শুনেছি। নিজের মান সম্মান বাঁচাতে তাকে ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে ইন্টারনেট ঘেঁটে ক্যালিগ্রাম কী জিনিস তা খোঁজা শুরু করলাম! সেই মানুষটিকে অনেক ধন্যবাদ। তিনি পরোক্ষভাবে না জানালে আমার ক্যালিগ্রাম নিয়ে কোনো ধারণা থাকতো কিনা সন্দেহ।

শ্রাবণ: যুক্তরাষ্ট্রে ব্যস্ততার মাঝে আমাদেরকে সময় দেবার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

নিপুণ: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

নিপুণ দেবনাথের আরো কিছু চিত্র

 

ছবিসূত্র

চিত্রকর নিপুণ দেবনাথের অনুমতিপূর্বক প্রকাশিত

Related Articles