Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

এগুলোর মাঝে কোন ফোবিয়াতে ভুগছেন আপনি?

ভয় হয়, চলতে-ফিরতে-উঠতে-বসতে আমাদের ভয় হয়। এ ভয়ে কখনো বিভিন্ন রকম আতঙ্কে ভুগি আমরা মানুষেরা। একেকজন একেক সময়ে একেক রকম আতঙ্কের শিকার হই। আতঙ্ক বা ফোবিয়ার রয়েছে শত শত প্রকার আর নাম। আজকে আমরা পরিচিত হতে যাচ্ছি এমনই কিছু ফোবিয়ার সাথে।

ফোবিয়া বা আতঙ্ক, এভাবেই পিছু করে মানুষের, phobics.society.org.uk

ফোবিয়া বা আতঙ্ক, এভাবেই পিছু ধাওয়া করে মানুষের; Image Source: phobics.society.org.uk

আতঙ্ক বা ফোবিয়া আসলে কী?

বাস্তব ও কাল্পনিক উভয় প্রকার ভয় থেকে জন্ম নেওয়া অবদমিত আবেগই মূলত আতঙ্ক বা ফোবিয়া। ফোবিয়াগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে এই ফোবিয়া মাঝে মাঝে প্রাণহানিকরও হয়ে ওঠতে পারে, যদিও বা অন্যের কাছে সেটা নিছক ন্যাকামি বা বিলাসিতা! মানুষ যা কখনো প্রকাশ করতে পারে না, কোনো না কোনোভাবে সেটাই একদিন আতঙ্ক হয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ায়।

ট্রাইপোফোবিয়া – গর্ত বা ছিদ্র নিয়ে আতঙ্ক

সাধারণত বড় নয়, এক্ষেত্রে ছোট ছোট গর্ত বা ছিদ্র দেখলে ব্যক্তি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এমনকি ছোট গর্ত আছে এ ধরনের কোনো ছবি দেখলেও তার মধ্যে এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। একক গর্তের চাইতে পুঞ্জীভূত গর্তের দৃশ্য আরো বেশি প্রভাব ফেলে ট্রাইপোফোবিকদের মধ্যে। হতে পারে সেটা শুকিয়ে যাওয়া কোনো মৌচাক, চুলায় বসানো দুধের মধ্যে বুদবুদ, স্নানঘরে দেখা সাবানের ফেনা, এমনকি নিজের ত্বকের লোমকূপও!

এই ফোবিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোনো গর্ত দেখলেই তাদের অবচেতন মন সেটিকে কোনো বিষাক্ত প্রাণীর মতো করে উপস্থাপন করে। এদের চোখে গর্তগুলোও অন্যদের চাইতে অনেক বেশি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে।

ট্রাইপোফোবিয়া, গর্ত বা ছিদ্রভীতি; www.businessinsider.com

ট্রাইপোফোবিয়া, গর্ত বা ছিদ্রভীতি; Image Source: www.businessinsider.com

শোনা যায় যে, ২০০৫ সালে এক আইরিশ মহিলার মধ্যে এই ফোবিয়াটি শনাক্ত করা হয়েছিলো। যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জিওফ কোল ও তার গবেষণা দল বহুদিন ধরেই ট্রাইপোফোবিয়া নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। জিওফ কোল বলেন, “ট্রাইপোফোবিয়া অথবা গর্ত বা ছিদ্রভীতি খুবই সাধারণ একটি ফোবিয়া। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই এটির সম্পর্কে জানি না।” কোলের গবেষণা দলের স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে শতকরা ১৬ ভাগই ট্রাইপোফোবিয়ায় আক্রান্ত। একজন স্বেচ্ছাসেবক তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এভাবে, “ছোট ছোট গর্ত বা ছিদ্র আমি একেবারেই সহ্য করতে পারি না। মনে হয় যেন গর্তগুলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পরই আমার দিকে ছুটে আসবে। আমার চারপাশ যেন ঘুরতে থাকে আমার সামনে…।

ট্রাইপোফোবিয়ার লক্ষণ হিসেবে শরীরে দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। যেমন- শরীরের কোনো অংশ ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, হাত-পা কাঁপা ইত্যাদি। গবেষকদের ধারণা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ছোট ছোট গর্তে বসবাসকারী জীবজন্তু, পোকা-মাকড় এড়িয়ে চলেছে এবং এ থেকেও ফোবিয়াটি উদ্ভুত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। জিওফ কোল নিজেও একসময় এই ফোবিয়ার শিকার হয়েছেন এবং বেশ কিছুদিন ভুগেছেনও, কিন্তু তিনি এ থেকে বেরিয়েও এসেছেন ‘Neuro Linguistic Programming Therapy’র মাধ্যমে। তিনি জোর করে গর্ত বা ছিদ্রের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতেন এবং একসময় তিনিই সফল হন ট্রাইপোফোবিয়া কাটিয়ে উঠতে। এছাড়া ট্রাইপোফোবিয়া দূরীকরণে Hypnosis, Behavior Therapy ও বেশ ভূমিকা পালন করে থাকে।

এরোফোবিয়া – উড়বার ভয়

মানুষ নাকি প্রায়ই পাখির মতো ডানা না থাকায় আফসোস করে, আফসোস করে পাখির মতো উড়তে না পারায়। বিজ্ঞানের এই আধুনিক যুগে মানুষ ডানা না পেলেও উড়বার সাধ থেকে বঞ্চিত থাকে নি। বিমানযাত্রা তাকে দিয়েছে আকাশের কাছাকাছি যাবার সুখ। কিন্তু উড়তে গেলেও কেউ কেউ হয়ে পড়েন আতঙ্কগ্রস্ত, যে আতঙ্ককে আমরা বলি ‘এরোফোবিয়া’ বা ‘এভিওফোবিয়া’। পৃথিবীর সমগ্র জনসংখ্যার শতকরা প্রায় ৬.৫ ভাগই এই আতঙ্কের শিকার। এর দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি বিমানযাত্রা করতে প্রচন্ড ভয় পান, এমনকি বিমানে চড়ার চিন্তাও তাকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে! গবেষকদের মতে, শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ বিমানযাত্রীই এই ফোবিয়াটিতে ভোগেন। প্রযুক্তির এই স্বর্ণযুগে বিমানযাত্রা তো অনস্বীকার্য একটি অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু অদ্ভুত এই আতঙ্কের কারণে ব্যক্তিজীবনে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাবার ইচ্ছেটুকুও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। মানুষের ব্যক্তিগত ও পেশাগত উভয় জীবনেই যেতে হয় অনেক ভোগান্তির মধ্য দিয়ে।

ওড়তে ভয় পান এরোফোবিকরা, en.avia.pro

উড়তে ভয় পান এরোফোবিকরা; Image Source: en.avia.pro

বিমানবন্দরে যাবার পর থেকেই এরোফোবিকদের অস্বস্তি শুরু হয়ে যায়। আশেপাশের মানুষজনের সাথে অশোভন আচরণও করে ফেলতে পারে কেউ কেউ! আবার কোনো কোনো এরোফোবিক অন্যের জন্য বিমানবন্দরে অপেক্ষা করতে পারে, কিন্তু নিজে যাত্রা করার বেলায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়। এ ফোবিয়াও বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন- বমি বমি ভাব, হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা, মৃত্যুচিন্তা, আন্ত্রিক পীড়া ইত্যাদি।

এরোফোবিয়াকে এক্রোফোবিয়া (উচ্চতাভীতি) ও ক্লস্ট্রোফোবিয়ার (বদ্ধ জায়গা নিয়ে আতঙ্ক) সাথে সম্পৃক্ত বলেও ভাবেন বিশেষজ্ঞরা। বিমান দুর্ঘটনা বা সন্ত্রাসের খবর অথবা বিমানযাত্রা নিয়ে কোনো ধরনের খারাপ অভিজ্ঞতা থেকে এই ফোবিয়াটি প্রবল হতে পারে।

মনোচিকিৎসক বা মনোবিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে এরোফোবিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পারেন। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এ ফোবিয়া দূর করতে বিমানযাত্রার পূর্বে কিছু ঔষধও সেবন করা যেতে পারে।

মাইসোফোবিয়া – জীবাণু নিয়ে আতঙ্ক

এটি ওসিডি (OCD – Obsessive Compulsive Disorder) এর সাথে সম্পৃক্ত একটি ফোবিয়া। দেখা গেছে যারা ওসিডিতে আক্রান্ত তাদের একটি বড় অংশ মাইসোফোবিয়ারও শিকার। অতিরিক্ত স্বাস্থ্যসচেতনতা বিষয়টিই এর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ফোবিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে সবসময়ই ভয় হতে থাকে যে, এই বুঝি তার খাবারটি জীবাণু দ্বারা দূষিত হয়ে গেলো বা কোনো কাজের পর তাড়াতাড়ি হাত না ধুলে তিনি জীবাণু আক্রান্ত হয়ে যেতে পারেন! মাইসোফোবিয়া চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছুলে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায় সকল প্রকার সামাজিক পরিবেশ এড়িয়ে যেতে থাকেন, এমন নজিরও আছে। এ ধরনের মানুষকে অন্যরা ‘শুচিবাই’ আছে বলে অভিহিত করে থাকে। এরা প্রায়ই অন্যদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ান, কেননা এরা শুধু নিজের ক্ষেত্রেই নয়, অন্যের কাজকর্মেও অতিসচেতনতার প্রতিফলন ঘটাতে চান। তাই এ ফোবিয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো ‘স্বনির্বাসন’।

এদের দিনের বেশিরভাগই কাটে ধুয়ে-মুছে! www.everydayhealth.com

এদের দিনের বেশিরভাগই কাটে ধুয়ে-মুছে; Image Source: www.everydayhealth.com

দেখা গেছে, মাইসোফোবিকরা দিনের বেশিরভাগ সময়ই কোনো জিনিস বা স্থান ধুচ্ছেন, পরিষ্কার করছেন। এমনকি তাদের অর্থের একটি বড় অংশ ব্যয় করা হয় পরিষ্কার করার জিনিসপত্র কিনতে! ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা’ ও মাইসোফোবিক হওয়ার মধ্যে রয়েছে গভীর পার্থক্য। মাইসোফোবিকদের জগতের একটি বিশেষ অংশ তাদের এই আতঙ্ক দিয়েই পরিপূর্ণ থাকে, অন্য কিছুই তেমন প্রাধান্য পায় না।

ওসিডি, বংশপরম্পরা, জীবাণুর দ্বারা অসুস্থ হওয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা ইত্যাদি এর পেছনে দায়ী হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদেরকে কাউন্সেলিং করাটাই একমাত্র উপায় তাদেরকে এ ঘোর বা ফোবিয়া থেকে বের করে আনার জন্য।

জীবনের সবটুকু ঘিরে ফেলে ব্যক্তির ফোবিয়া! www.mapsofindia.com

জীবনের সবটুকু ঘিরে ফেলে ব্যক্তির ফোবিয়া; Image Source: www.mapsofindia.com

ফোবিয়া বা আতঙ্কের কারণ আমাদেরই মধ্যে লুকিয়ে থাকে, ফোবিয়াকে চিহ্নিত করা ও তার সমাধান বহুলাংশেই ভুক্তভোগীর নিজের সচেতনতার মুখাপেক্ষী। একে একে কেটে যাক একেকটি ফোবিয়ার পর্দা, সুস্থ জীবনের পথে চলুক একেকটি ব্যক্তি।

 

The article above is written in Bangla language. It states about different types of phobia and their causes.

References:

1) priyo.com/2013/09/09/30624.html
2) fearof.net/top-10-phobias-of-all-time/

Featured Image: fiveoutsiders.com

Related Articles