Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যুদ্ধ এবং খেলাধূলা: খেলায় জিততে সান জুর তের নীতি

যুদ্ধ এবং খেলাধূলার একটাই লক্ষ্য; সেটা হলো প্রতিপক্ষের পরাজয়। যুদ্ধে বিজয় নিশ্চিত হয় যখন প্রতিপক্ষ নতি স্বীকার করে বা নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। আর খেলাধূলায় যে দল সবচেয়ে বেশি স্কোর করে সে জয়ী হিসেবে স্বীকৃত হয়। কিছু কিছু খেলাতে যেমন বক্সিং এ প্রতিপক্ষকে নক আউট করতে হয় অথবা খেলা শেষের আগে পরাজয় স্বীকার করাতে হয়।

অতি প্রাচীনকালে, খ্রিস্টের জন্মের পাঁচশো বছর আগে চি রাজ্যে সান জু নামে একজন সমরবিশারদ ছিলেন। তার প্রজ্ঞা চীনের অন্যান্য প্রদেশেও খ্যাত হয়েছিল।  কারো কারো মতে আনুমানিক ৫৪৪ খ্রি.পূ. তে সান জু’র জন্ম এবং ৪৯৬ খ্রি.পূ. তে মৃত্যুবরণ করেন।  আর্ট অব ওয়ার এর আরেকজন প্রধান অনুবাদক ও গবেষক স্যামুয়েল গ্রিফিথ মনে করেন খ্রি.পূ. ৩য় শতক থেকে খ্রি.পূ. ২য় খ্রি.পূ. এর মাঝে সান জু বেঁচেছিলেন।

দ্য আর্ট অব ওয়ার শুধু একটি রণনীতির বই-ই নয় রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, খেলাধূলা থেকে শুরু করে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটা যেমন জেনারেলদের জন্য ম্যানুয়ালের মত কাজ করেছে তেমনি যেকোন সংকটময় পরিস্থিতিতে যে কেউ এর থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।  যে কোন ব্যক্তি, যে কোন পেশা থেকেই এ বইটি পড়তে পারে। আসলে এটা বইয়ের চেয়েও বেশি কিছু, এটা ম্যানুয়াল বা গাইডলাইন। যারই জীবন পাল্টে দেয়ার উচ্চাকাঙ্খা রয়েছে সেই-ই এটা পড়তে পারে।

তের অধ্যায় বা টপিকে বিভক্ত সান জু’র ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ যুদ্ধক্ষেত্রের জায়গায় খেলার মাঠ নিয়ে আসলে দেখবেন একেবারে খাপে খাপে মিলে যায়। আপনি যুদ্ধ জয়ের জায়গায় শুধু ম্যাচ জেতার কথাটি বুঝুন। স্কুল ফর চ্যাম্পিয়নস ডট কম ওয়েবসাইটে রন কার্তোসের লেখা অবলম্বনে খেলাধূলাতে সান জুর সূত্র কার্যকর হওয়ার বিষয়টি দেখানোর চেষ্টা করা হবে।

১. পরিকল্পনা করা: বিভিন্ন ধরণের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় আপনি আপনার সেরাটা দিলে জয়ী হবেন। আর যদি কোন প্রস্তুতি না নিয়েই নামেন তাহলে নিশ্চিত পরাজিত হবেন। যুদ্ধের মতো খেলাধূলাতেও ছলচাতুরি রয়েছে। প্রতিপক্ষকে বিভিন্ন ফাঁদে ফেলে বা ফাকি দিয়ে আপনার বিজয়টা নিশ্চিত করতে হয়। আবার আপনার প্রতিপক্ষও আপনার বিরুদ্ধে এসব অস্ত্র নিয়ে বসে থাকে। সেটা নিয়েও আগেভাগে প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।

কোন দল জিতবে আর কোন দল হারবে তার পরিকল্পনা দেখেই টের পাওয়া যায়। জয়ী সেনাপতি মাঠে নামার আগেই বিজয়ের হিসেব করে নামে। আর যে পরাজিত সেনাপতি সে কোন পরিকল্পনা না নিয়ে বা অল্প পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে। যার পরিকল্পনা সবচেয়ে সেরা সে বিজয়ী হবে এটাই সান জুর নীতি। যেকোন খেলাধূলাতেই এই নিয়ম প্রযোজ্য। প্রত্যেকটি খেলাতেই আমরা দেখবো একজন খেলোয়াড় মাঠে সেরাটা ঢেলে দেওয়ার জন্য খেলার দিনের অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে থাকে। যে অনেক সূক্ষ্মভাবে, সুশৃঙ্খলতার সাথে প্রস্তুতি নিয়ে থাকে তার জেতার সম্ভাবনা তত বেশি।

২. যুদ্ধ ঘোষণা: সম্প্রতি মারা যাওয়া বক্সিং কিংবদন্তী মোহাম্মদ আলীর ক্যারিয়ারের দিকে যদি আমরা খেয়াল করি দেখবো এক অসাধারণ যোদ্ধার জীবন। প্রতিটি ম্যাচের আগে তিনি বিভিন্ন মিডিয়াতে যে হুমকি দিতেন বা ভোকাবুলারি ব্যবহার করতেন সেগুলো ছিল একেবারে যুদ্ধেরই ভোকাবুলারি!

অন্যান্য খেলাধূলাতেও ম্যাচের আগে যুদ্ধ ঘোষণার মতো ঘোষণা আসে। ভারত-পাকিস্তান বা অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের অ্যাসেজ সিরিজ আর কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশ-ভারত, বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ক্রিকেট ম্যাচগুলো শুরুর আগে যেন যুদ্ধ ঘোষণার মতোই ঘোষণা আসে। আর মাঠেও অনেক সময় খেলোয়াড়রা যুদ্ধংদেহি হয়ে একে অন্যের উপর চড়াও হন। বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যে সিরিজে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মধ্যে কয়েকবার প্রায় হাতাহাতি হয়েছে। ইংল্যান্ডের বাটলার ও বেন স্টোকসের সাথে সাব্বির ও তামিমের উত্তপ্ত ব্যবহার মাঠে ও মাঠের বাইরে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। আর সাকিব আল হাসানের স্যালুট বিশ্ব ক্রিকেট লিজেন্ডে স্থান করে নিয়েছে সেটা বলাই বাহুল্য। সাকিবের স্যালুটই মনে করিয়ে দেবে বাংলাদেশ ও ইংল্যান্ডের মধ্যেকার একটি উত্তপ্ত সিরিজের কথা।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিরিজ শুরু হওয়ার আগেও দেশগুলোর গণমাধ্যমের লোক থেকে শুরু করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আম জনতা সবার মধ্যেই যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব চলে আসে। ফুটবলে যেমনটা দেখা যায় আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড, বার্সেলোনা-রিয়াল মাদ্রিদ। এ দলগুলোর মধ্যে খেলা শুরুর অনেক আগে থেকেই যুদ্ধ ঘোষণার মতো পরিস্থিতি কাজ করে। বিভিন্ন গোপন পরিকল্পনা, প্রতিপক্ষের কৌশল জেনে নেওয়ার চেষ্টা ইত্যাদি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত সময় কাটে দলগুলোর।

৩. কৌশলী আক্রমণ: খেলাধূলায় সর্বোত্তম বিজয় হচ্ছে মর্যাদার সাথে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে দেওয়া। প্রতিপক্ষকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার মধ্যে বীরত্ব নেই। প্রতিপক্ষের সম্মান অর্জন করা অনেক বড় সফলতা।

৪. কৌশলী পদক্ষেপ: প্রথমে নিজেকে পরাজয়ের সম্ভাবনা থেকে দূরে রাখতে হবে। তারপর সুযোগ খুজতে হবে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার। নিজেকে অপরাজেয় রাখার বিষয়টি নিজের হাতেই থাকে। আর প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করার সুযোগ প্রতিপক্ষ নিজেই দিয়ে থাকে। সেটা বুঝে নিতে হয় এবং কাজে লাগাতে হয়।

যে খেলোয়ার ডিফেন্সে শক্তিশালী সে তার ক্ষমতাটা গোপন রাখবে। আর যে আক্রমণে দক্ষ সে উপর থেকে চড়াও হবে একেবারে বজ্রপাতের মতো। এভাবে সে নিজেকে রক্ষা করবে আবার পরিপূর্ণ বিজয় অর্জন করবে।

৫. শক্তি: ক্ষণস্থায়ী খেলা আর দীর্ঘস্থায়ী খেলায় নিয়ন্ত্রণের নীতি একই; আপনার চালটা ঠিকমতো হওয়া চাই। শক্তি ম্যাচের পুরো সময়টাতে ধরে রাখতে হবে। ইংল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের সর্বশেষ সিরিজে বাংলাদেশ জিততে জিততে বেশিরভাগ ম্যাচ হেরে গিয়েছিল। কারণটা খেয়াল করলে আমরা দেখবো শেষ পর্যন্ত শক্তি বা দমটা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ দল। আর ইংল্যান্ড কঠিন পরিস্থিতিতেও দলের শক্তি ও দম ধরে রেখেছিল। এজন্য ফল নিজেদের ঘরে নিয়ে যেতে পেরেছিল।

৬. দুর্বল পয়েন্ট ও শক্তিশালী পয়েন্ট: প্রথমে যে আক্রমণ করে সে লড়াইয়ের জন্য উদ্যমী থাকে। আর যে আক্রমণে দ্বিতীয় সে একটু পিছিয়ে থাকে বা প্রথম আক্রমণের শিকার হয়ে একটু কাবু হয়ে পড়ে।

এজন্য চালাক খেলোয়াড় প্রথম প্রথম আক্রমণ করে প্রতিপক্ষকে নিজের ইচ্ছের কাছে বন্দি করে দেয়। আবার নিজেকে প্রতিপক্ষের কৌশলের জালে পড়তে দেয় না।

৭. ম্যানুভারিং/আক্রমণ: পুরো শক্তি ও কৌশল কাজে লাগিয়ে আক্রমণ করতে হবে। বিভিন্ন কৌশলের মিশ্রণে প্রতিপক্ষকে ভ্যাবাচেকা খাইয়ে দিতে হবে।

৮. কৌশলে ভিন্নতা: যে খেলোয়ার কৌশলে ভিন্নতা নিয়ে আসতে পারে না সে জয়ের ফর্মূলা জানে না। যে বিভিন্ন কৌশল জানে এবং এর যথোপযুক্ত ব্যবহার করতে পারে আবার প্রয়োজনে কৌশলে ভিন্নতা নিয়ে আসতে পারে সে জয়ী হবে।

৯. খেলার মাঝখানে: খেলা যখন এগিয়ে যেতে থাকবে তখন সতর্ক থাকতে হবে আপনার কোন এক অসতর্ক মুহূর্তে প্রতিপক্ষ যেন কাউন্টার-অ্যাটাক করে হারিয়ে না দেয়। আবার প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে নিজের জন্য সুযোগ করে নেওয়ার চেষ্টাও করতে হবে।

১০. অবস্থানের ব্যবহার: সবসময় লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকো। যদি তোমার প্রতিপক্ষ ভালো একটা লড়াই উপহার দেওয়ার জন্য অপ্রস্তুত থাকে তাহলে তাকে ভালোভাবে হারিয়ে দাও। কিন্তু সে যদি তোমার আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকে এবং তুমি যদি তাকে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হও তাহলে কিন্তু খবর আছে। হয়তো তোমাকে হেরে মাঠ ছাড়তে হবে।

১১. অবস্থান: আপনাকে বিভিন্ন অবস্থানে খেলতে হতে পারে। সবসময় অবস্থানের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আপনার প্রতিপক্ষের শক্ত ও দুর্বল অবস্থানের মধ্যে যোগাযোগের জায়গাটার দিকে খেয়াল রাখবেন এবং দুটোর মধ্যে সমন্বয় যেন না হয় সেদিকে সতর্ক থাকবেন। আবার প্রতিপক্ষের ভালো খেলোয়ারের সাথে দুর্বল খেলোয়াড়ের সংযোগের মাঝে বাগড়া বাধাতে হবে। প্রতিপক্ষ কোন একদিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়লে সেদিক দিয়ে হামলে পড়তে হবে।

১২. ব্যাপক শক্তি দিয়ে আক্রমণ: খেলাতে আপনার প্রতিপক্ষকে ব্যাপক শক্তি দিয়ে আক্রমণ করতে হবে। সে যেন প্রতিরোধ করার সুযোগ না পায়। খেলায় জেতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য সম্ভব যত উপায় কাজে লাগাতে হবে। আপনি একটু ছেড়ে দিলে কিন্তু প্রতিপক্ষ সে সুযোগ নিয়ে আপনাকে কাবু করে ফেলবে।  রিকি পন্টিং এর নেতৃত্বে সেরা সময়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার কথা মনে আছে? তারা প্রতিপক্ষকে এক বিন্দুও ছাড় দিতো না। প্রতিপক্ষ কোন দুর্বলতা প্রদর্শন করলে তাদেরকে একেবারে গুড়িয়ে দিতো।

২০১৪ সালের বিশ্বকাপ সেমি ফাইনালে ব্রাজিলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে একেবারে তছনছ করে দেয়। ম্যাচের প্রথম দিকেই একটি গোল খেয়ে দলীয় মনোবল সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলেছিল ব্রাজিল। কয়েক মিনিটের মধ্যে আরও কয়েকটি গোল খেয়ে ফেলাতে দল হিসেবে মনোবল একেবারে হারিয়ে ফেলে। সেই দুর্বল মনোবলের ব্রাজিল দলকে গুনে গুনে সাতটি গোল দিয়ে দেয় জার্মানী। ব্যাপক শক্তি দিয়ে আক্রমণ বলতে কি বুঝায় আমরা ব্রাজিলের সাথে খেলা সেই জার্মানীর দিকে তাকালেই হবে।

১৩. প্রতিপক্ষকে জানা: আপনার প্রতিপক্ষকে ভালো করে জানতে পারবেন অন্যের সাথে তার প্রতিযোগিতা পর্যবেক্ষণ করে। অন্য খেলোয়ারের কাছ থেকেও জেনে নিতে পারেন আপনার প্রতিপক্ষ কোন কোন জায়গায় দুর্বল। প্রতিপক্ষকে নিয়ে এই জানাশুনা আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

সান জু’র সবচেয়ে বিখ্যাত নীতিটাই যে এমন- শত্রুকে জানো, নিজেকে জানো। শত যুদ্ধেও তুমি অপরাজেয় থাকবে

প্রায় সব খেলাই কিন্তু যুদ্ধের মতোই। যুদ্ধনীতি ভালো করে বুঝলে খেলার নীতিটাও বুঝা হয়ে যাবে।

This article is in Bangla language. It's about the ways of winning a war or sports according to Sun Tzu. ‎

References:

১. দ্য আর্ট অব ওয়ার- সান জু, ইংরেজি অনুবাদ: লায়োনেল জাইলস

২. দ্য আর্ট অব ওয়ার- সান জু, ইংরেজি অনুবাদ: স্যামুয়েল গ্রিফিথ

৩. ইউজিং ‘দ্য আর্ট অব ওয়ার’ ইন অ্যাথলেটিক কম্পিটিশনস, রন কার্তোস, স্কুল ফর চ্যাম্পিয়নস্ ডট কম ওয়েবসাইট

৪. দ্য আর্ট অব ওয়ার, সান জু-বাংলা অনুবাদ: সাবিদিন ইব্রাহিম

Featured Image: WikiHow

Related Articles