Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জিন ঝুই – বিশ্বের সবচেয়ে অক্ষত মমির অমীমাংসিত রহস্য

আজ থেকে প্রায় ২,১০০ বছর আগেকার কথা, চীনে তখন চলছে হান রাজবংশের শাসনকাল। এ সময়কে চীনের ইতিহাসে ‘স্বর্ণালী সময়’ বলা হয়ে থাকে। সেই সময়েরই অভিজাত বংশীয় এক লোকের স্ত্রীর নাম ছিলো জিন ঝুই। কালের স্রোতে একসময় হারিয়ে গেছেন সেই লোকটি, হারিয়েছিলেন তার স্ত্রীও। জিন ঝুইয়ের বেলায় ‘হারিয়েছিলেন’, কিন্তু তার স্বামীর বেলায় ‘হারিয়ে গেছেন’ কেন বললাম অনুমান করতে পারেন?

কারণ প্রায় ২,১০০ বছর পর আমাদের মাঝে আবারো ফিরে এসেছেন জিন ঝুই। তবে সশরীরে (যা অসম্ভব) কিংবা প্রেতাত্মার বেশে নয়, মমির আকৃতিতে। আর জিন ঝুইয়ের সেই মমিটিকে বলা হয়ে থাকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে চমৎকারভাবে সংরক্ষিত মমি, যার কৌশল উদঘাটন করা সম্ভব হয় নি আজও!

জিন ঝুইয়ের মমি

তৎকালীন নানা নথিপত্র ঘেঁটে জিন ঝুইয়ের জীবনযাত্রা সম্পর্কে মোটামুটি ভালোই ধারণা পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদগণ। অভিজাত পরিবারের সদস্য জিন ঝুই ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন বেশ অপব্যয়ী। তার নিজেরই কয়েকজন বেতনভুক্ত মিউজিশিয়ান ছিলো। কোনো পার্টিতে কিংবা নিজের বিনোদনের জন্য মাঝে মাঝেই ডাক পড়তো তাদের। ঝুই নিজেও বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। মাঝে মাঝেই তার হাতে বাজতে দেখা যেত সাত তারের চীনা বাদ্যযন্ত্র ‘কিন (Qin)’।

কিন

আর আট-দশটা অভিজাত পরিবারের মতো ঝুইয়ের পরিবারও খেতো দামী দামী সব খাবারদাবার। এসব খাবার তৎকালীন সাধারণ মানুষেরা শুধু স্বপ্নেই দেখতে পারতো। খাবারদাবারের পাশাপাশি পোশাকের ব্যাপারেও বেশ সৌখিন মনোভাবের পরিচয় দিতেন তিনি। রেশমী কাপড়ের পাশাপাশি অন্যান্য আরো মূল্যবান কাপড় ছিলো তার পরিধেয় বস্ত্রের তালিকায়। অন্যদিকে রূপসজ্জার জন্য বাহারি প্রসাধনী সামগ্রীর সংগ্রহ তো ছিলোই!

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই বয়স বেড়ে চলেছিলো জিন ঝুইয়ের, সেই সাথে বাড়ছিলো বয়সজনিত শারীরিক অসুস্থতাও। দিনভর খাওয়াদাওয়া ও অল্প পরিশ্রমে ওজন বেড়ে গিয়েছিলো তার। এর ফলশ্রুতিতে করোনারি থ্রম্বোসিস ও আর্টারিওস্ক্লেরোসিস বাসা বেধেছিল তার শরীরে। মেরুদন্ডের সমস্যা তার চলাফেরা করে তুলেছিলো বেশ কঠিন। এছাড়া পিত্তথলিতে পাথরও তার শারীরিক অবস্থা অবনতির জন্য দায়ী ছিলো।

অবশেষে সকল আভিজাত্যের মায়া কাটিয়ে, শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে পঞ্চাশ বছর বয়সে ১৬৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জিন ঝুই। এর আগেই অবশ্য মৃত্যু হয়েছিল তার স্বামীর। চীনের হুনান প্রদেশের রাজধানী চাংশার মাওয়াংদুই এলাকায় বিশালাকার এক কবরেই শেষ পর্যন্ত ঠাই হয় ঝুইয়ের মমির।

১৯৭১ সালের কথা, সময়টা তখন ছিলো স্নায়ুযুদ্ধের। বিমান হামলা থেকে বাঁচতে মাটির নিচে একটি আশ্রয় কেন্দ্র খুঁড়তে কাজ করে যাচ্ছিলো একদল শ্রমিক। এভাবে খুঁড়তে খুঁড়তেই আকস্মিকভাবে জিন ঝুইয়ের সমাধি ফলকের সন্ধান পেয়ে যায় তারা। সেই সাথে পাওয়া যায় তার স্বামী এবং আরেক তরুণের মৃতদেহও, যাকে তার ছেলে বলেই ধারণা করা হয়ে থাকে।

এরপরই নড়েচড়ে বসে চীনের সরকার। পরের বছরের জানুয়ারিতে দেড় হাজারেরও বেশি স্থানীয় হাই স্কুল শিক্ষার্থীর সহায়তায় বৃহদাকারে খননকার্য শুরু করেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। জিন ঝুইয়ের স্বামীর কবরটি অতটা ভালো অবস্থায় ছিলো না। তবে তার এবং তার ছেলের কবরটি ধারণার চেয়েও ভাল অবস্থায় পেয়ে যান প্রত্নতত্ত্ববিদগণ।

একেবারে মাঝখানে থাকা ঝুইয়ের কবরটিকে ঘিরে রেখেছিলো চারটি কম্পার্টমেন্ট। এগুলো থেকেই তৎকালে পরকাল নিয়ে তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। একেবারে উপরের কম্পার্টমেন্টটি এমনভাবে বানানো হয়েছিলো যাতে ঝুই সেখানে বসে খাওয়াদাওয়া করতে পারেন। কুশন, হাতলওয়ালা চেয়ার ও তার হাতের লাঠি রাখা ছিলো সেখানে।

শিল্পীর কল্পনার ঝুইয়ের সমাধিস্তম্ভ

জিন ঝুইয়ের কবরে পাওয়া জিনিসগুলোই বলে দিচ্ছিলো তৎকালীন সমাজে তিনি বেশ অভিজাত এক পরিবারের সদস্য ছিলেন। তবে সেখানে থাকা ধন-সম্পদের প্রাচুর্য আকৃষ্ট করে নি প্রত্নতাত্ত্বিকদের। তারা আশ্চর্য হয়েছিলেন তার দেহ সংরক্ষণের অসাধারণ সেই কৌশলের কথা ভেবে যার বদৌলতে জিনকে তখনও মাত্র কয়েকদিন আগে মৃত বলেই মনে হচ্ছিলো!

দেখে মনে হয় কেউ বুঝি মুখ হা করে ঘুমোচ্ছে!

প্রায় ২,১০০ বছর আগে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেও যখন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা তার মমিটি উদ্ধার করেন, তখনও তার চামড়া ছিলো আর্দ্র ও স্থিতিস্থাপক। শরীরের সংযোগস্থলগুলো তখনও ছিল বেশ নমনীয়। চোখের পাপড়ি কিংবা নাকের লোম তখনও ছিলো একেবারে সজীব! শরীরের কিছু শিরায় পাওয়া গিয়েছিলো রক্তের উপস্থিতিও। কবর থেকে যখন ঝুইয়ের মৃতদেহটি বের করে আনা হয়, তখন পরিবেশে থাকা অক্সিজেনের প্রভাবে ধীরে ধীরে তার দেহের অক্ষত রুপটি চলে যায়। তাই এখন আমরা জিন ঝুইয়ের মমির যে অবস্থা দেখতে পাই, উত্তোলনকালীন অবস্থা ছিলো এর চেয়ে অনেক ভালো। উত্তোলনের পর দেহটির ময়নাতদন্ত করে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যান ফরেনসিক সায়েন্টিস্টরা। কারণ ঝুইয়ের দেহটি এমন অবস্থায় ছিলো যে, দেখে মনে হবে মাত্র কিছুদিন আগেই মৃত্যু হয়েছে তার।

ঝুইয়ের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিলো বেশ সজীব অবস্থায়। তার শিরায় জমাট বাঁধা রক্তের সন্ধান পাওয়া যায় ময়নাতদন্ত করে। হৃদরোগের কারণে তার মৃত্যুর ব্যাপারটি বিজ্ঞানীরা এর মাধ্যমেই নিশ্চিত হন। এছাড়া ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল, যকৃতে অসুখ, পিত্তথলিতে পাথরের ব্যাপারে নিশ্চিত হন তারা।

ঝুইয়ের দেহ নিয়ে তদন্তের সময় বিজ্ঞানীরা তার খাদ্যনালী, পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্ত্রে ১৩৮টি হজম না হওয়া তরমুজের বিচি খুঁজে পান। তরমুজের বিচি হজম হতে প্রায় এক ঘন্টার মতো সময় লাগে। তাই বিজ্ঞানীরা এটা বুঝতে পারলেন যে, তরমুজ খাওয়ার এক ঘন্টারও কম সময়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন এ নারী।

জিন ঝুইয়ের কবরটি ছিলো মাটি থেকে প্রায় ১২ মিটার নিচে, বায়ুরুদ্ধ অবস্থায়। চার স্তরের কফিনের মাঝে আবদ্ধ ছিলেন তিনি। মেঝেতে ছিলো পেস্টের মতো সাদা, পুরু এক পদার্থের আস্তরণ। ২০ স্তরের রেশমী কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো হয়েছিলো তার দেহটি। এটি ডুবিয়ে রাখা ছিলো প্রায় ৮০ লিটার অপরিচিত এক তরলে যাতে সামান্য ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ফানেলাকৃতির, চারদিকে কাদা দিয়ে আটকানো একটি ভল্টের মাঝখানে থাকা কম্পার্টমেন্টের ভেতরে পাওয়া গেছে শবাধারগুলো। আর্দ্রতা শোষণের জন্য সেই ভল্টের চারদিকে ছিলো প্রায় ৫ টনের মতো কাঠ-কয়লার স্তুপ। এর উপরের অংশটি আবার ৩ ফুট পুরু কাদা দিয়ে আটকে দেয়া ছিলো।

কফিনগুলো এমনভাবেই বায়ুরুদ্ধ পরিবেশে রাখা হয়েছিলো যাতে সেখানে কিছু ঢুকতে কিংবা সেখান থেকে কিছু বেরোতে না পারে। ভেতরে থাকা পচনে সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়াগুলো মারা গিয়েছিলো অক্সিজেনের অভাবে। মাটির নিচের পানিও এত বাধা পেরিয়ে ঝুইয়ের মমিটির কোনো ক্ষতি করতে পারে নি। এত প্রতিরোধ ব্যবস্থার ফলেই তার মমিটি এতদিন পরেও এত অক্ষত অবস্থায় পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

এই কফিনগুলোর একটার ভেতরে আরেকটা রাখা ছিলো। যার একেবারে ছোটটির ভেতরে ছিলেন ঝুই

জিন ঝুইয়ের কবর খুঁড়ে প্রত্নতত্ত্ববিদেরা এক হাজারেরও বেশি মূল্যবান সামগ্রী খুঁজে পেয়েছেন। এর মাঝে রয়েছে অনেকগুলো দামী কাপড়, একটি পুরো ওয়্যারড্রোব ভর্তি একশরও বেশি রেশমী কাপড়, ১৮২টি বার্ণিশ করা পণ্যসামগ্রী, ১৬২টি খোদাইকৃত কাঠের মূর্তি যারা পরকালে তার নির্দেশানুসারে বিভিন্ন কাজ করবে ইত্যাদি নানা জিনিসপত্র। এর মাঝে বার্ণিশ করা দ্রব্যগুলোর কথা বিশেষভাবে বলা লাগে। এগুলোর মাঝে ছিলো থালা, গামলা, ট্রে, ফুলদানি, বেসিন ইত্যাদি। এগুলোর ঘন কালো ও লাল প্রলেপ এতটাই উজ্জ্বল ছিলো যে, দেখে মনে হচ্ছিলো মাত্র সেদিন বানানো হয়েছে!

পরকালের যাত্রাপথে ক্ষুধা নিবারণের জন্য ঝুইয়ের সাথে ৩০টি বাঁশের পাত্র ও কয়েকটি মাটির পাত্র ভরে দেয়া হয়েছিলো হরেক রকম খাবার। এর মাঝে ছিলো গম, মসুর ডাল, পদ্মফুলের মূল, স্ট্রবেরী, নাশপাতি, খেজুর, আলুবোখারা, শূকর, হরিণ, গরু, ভেড়া, খরগোশ, কুকুর, পাতিহাস, রাজহাস, মুরগি, ফিজ্যান্ট, শ্যামঘুঘু, চড়ুই, সারস, ডিম ও পেঁচা!

বেঁচে থাকতে জিন ঝুই অনেকটা এমনই ছিলেন দেখতে

প্রাচীনকালে মিশরীয়রা কীভাবে মমি বানাতো মনে আছে? আগের এক লেখায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছিলাম। সংক্ষেপে আবারো মনে করিয়ে দিচ্ছি। প্রথমে তারা মৃতদেহটিকে ভালো করে ধুয়ে নিতো। তারপর একে একে মগজ, পাকস্থলী, ফুসফুস, যকৃত ও অন্ত্র বের করে আনা হতো বিশেষ পদ্ধতিতে। এবার পেটের ফাঁকা জায়গাটি ধূপ ও অন্যান্য পদার্থ দিয়ে ভরাট করে দেয়া হতো। এরপর দেহটিকে ৩৫-৪০ দিন ন্যাট্রনের মাঝে রেখে দিলে তা একেবারে শুকিয়ে যেত। এরপর আবার পেটের ভেতরের সেই পদার্থগুলো বের করে সেখানে ন্যাট্রন, রজনে সিক্ত কাপড় ইত্যাদি দিয়ে পুরো দেহটি ব্যান্ডেজে মোড়ানো হতো। এভাবেই শেষ পর্যন্ত পাওয়া যেত বহুল কাঙ্ক্ষিত সেই মমিটি।

এভাবে মমি বানানোর কৌশল উদ্ভাবন করে ইতিহাসে নিজেদের যে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে মিশরীয়রা, সেই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু জিন ঝুইয়ের এ মমি প্রস্তুতিতে মিশরীয়দের মতো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় নি। তাদের মতো অভ্যন্তরীন এত অঙ্গও অপসারণ করা হয় নি ঝুইয়ের বেলায়।

বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েও আজ পর্যন্ত বিজ্ঞানীগণ জিন ঝুইয়ের দেহ যে প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয়েছিলো, সেটি হুবহু নকল করতে সক্ষম হন নি। তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার মমিটি ডুবিয়ে রাখা সেই ৮০ লিটার তরল কোথা থেকে এসেছিলো, তারও কোনো কূলকিনারা করা সম্ভব হয়ে ওঠে নি আজও। ঝুইয়ের কবরের একশ মাইলের কাছাকাছি একই প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত আরো বেশ কিছু মমির সন্ধান পাওয়া গিয়েছিলো। কিন্তু প্রতিবারই তরলের বৈশিষ্ট্য ছিলো আলাদা।

এভাবেই প্রাচীন চীনের মমি প্রস্তুতকারকেরা এতটা দক্ষতার সাথে জিন ঝুইয়ের মমি প্রস্তুত করেছিলেন যে, এ শিল্পে তাদের সবচেয়ে সফল বলেও মেনে নেন অনেকে! আর সেই মমি বানানোর কৌশল আজও রয়ে গেছে এক রহস্য হিসেবেই। এজন্যই হয়তো একে বলা হয়ে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে অক্ষতরুপে সংরক্ষিত মমি।

মিশরীয়দের মমি বানানোর কৌশল সচিত্র পড়ে নিতে পারেন নিচের লেখাটি থেকে:

প্রাচীন মিশরীয়রা মৃতদেহ থেকে যেভাবে মমি বানাতো

আজ ছিলো আমাদের নতুন সিরিজ ‘অমীমাংসিত রহস্য’-এর প্রথম পর্ব। এরপর থেকে একে একে এমন আরো পর্ব আসবে। সাথেই থাকুন।

This article is in Bangla Language. Its about unsolved mystery of the worlds best preserved mummy of Xin Jhui.
References:

1. ancient-origins.net/ancient-places-asia/enduring-mystery-lady-dai-mummy-001357?nopaging=1

2. en.wikipedia.org/wiki/Xin_Zhui

3. thesun.co.uk/living/2299057/the-worlds-best-preserved-mummy-the-lady-of-dai-is-soft-to-the-touch-has-bendy-arms-and-is-2100-years-old/

4. khanacademy.org/humanities/ap-art-history/south-east-se-asia/china-art/a/funeral-banner-of-lady-dai-xin-zhui

5. thevintagenews.com/2016/12/17/rw-many-styles-ancient-greek-helmets/

6. roarbangla.com/history/how-mummies-were-made-by-ancient-egyptians/

Featured Image: wickedfacts.com

Related Articles