Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

উড়োজাহাজ নিয়ে ঘটে যাওয়া কিছু রহস্যজনক এবং অমীমাংসিত ঘটনা

অ্যারোপ্লেন বা, উড়োজাহাজে ভ্রমণকে সবচেয়ে বেশি নিরাপদ এবং আরামদায়ক বলে মনে করা হয়। এতে সময়ও অনেক কম লাগে। এর ফলে অনেকেই হয়ত উড়োজাহাজ ভ্রমণকেই তাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নেন। কিন্তু এই উড়োজাহাজকে নিয়েও আছে অনেক রহস্যজনক এবং অমীমাংসিত ঘটনা। যেগুলো জানার পরে হয়ত আপনি পরবর্তীতে উড়োজাহাজে ভ্রমণের সময় দ্বিতীয়বার চিন্তা করবেন। তো চলুন জেনে নেয়া যাক সেই অদ্ভুত ঘটনাগুলো।

বারমুডা ট্রায়াঙ্গালের শিকার ফ্লাইট নাইনটিন

Source: history.com

Image courtesy: history.com

তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবেমাত্র শেষ হয়েছে। ৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৫। আমেরিকান নেভি তাদের পাঁচটি টর্পেডো বোম্বার্স নিয়মিত প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বারমুডা ট্রায়ঙ্গালের (অনেকের মতে শয়তানের ত্রিভুজ) উপড় দিয়ে ওড়ার জন্য প্রেরণ করল। বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল; মায়ামি, বারমুডা এবং পুয়ের্তো রিকো দ্বারা ঘেরা এক রহস্যময় জায়গা। বিমানগুলো প্রেরণ করার দের ঘন্টা পর পাইলটরা জানায় তারা দিক হারিয়ে ফেলেছে এবং পথ চিনতে পারছে না। প্রশিক্ষণ দলটির নেতা এবং বেশ অভিজ্ঞ বৈমানিক টেইলর নাভাল রেডিওর মাধ্যমে এয়ার স্টেশানকে জানান তাঁর দুটি কম্পাসই নষ্ট হয়ে গেছে।

এই পাঁচটি টর্পেডো বোম্বার্সকে আর কখনও দেখা যায়নি। দেখা যায়নি তাদের ১৪ জন ক্রু মেম্বারদেরও। তারা হারিয়ে যাওয়ার কিছু সময় পরে আমেরিকান নেভি একটি মেরিনার ফ্লায়িং বোটে আরো ১৩ জনের উদ্ধার দল পাঠায়। তারপর? হ্যাঁ, সেই উদ্ধার দলের ১৩ জনও আর কখনই ফিরে আসেনি। কখনই না। আজও এ ঘটনা এক রহস্যই রয়ে গেছে। বিস্ময়ের বিষয় কোন মৃতদেহ কিংবা প্লেন কোন কিছুই আর পরবর্তিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তিতে অনেক অনুসন্ধান চালানো হলেও প্লেন এবং ক্রুদের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণ বের করা সম্ভব হয়নি।

আর্টিস্টের কল্প্নায় ঘটনাটি Source: (en.wikipedia.org)

আর্টিস্টের কল্প্নায় ঘটনাটি; Image courtesy: (en.wikipedia.org)

এই ঘটনার আরেক চমকপ্রদ দিক হচ্ছে টেইলর যে প্রশিক্ষণ দলটির নেতা ছিল সে সেদিনের প্রশিক্ষণে কোন কারণ প্রদর্শন না করেই না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। নেভি তাঁর কথা শোনে না এবং তাকে জোর করে এই মিশনে পাঠায়। টেইলর কি তবে কিছু আঁচ করতে পেরেছিলেন?

অ্যামেলিয়া এয়ারহার্টের বিশ্ব ভ্রমণ

Source: biography.com

Image courtesy: biography.com

অ্যামেলিয়া এয়ারহার্ট ছিলেন খুবই দক্ষ একজন বৈমানিক। ১৯৩৭ সালে এ নারী বিমানে করে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন। তিনি প্রথম নারী পাইলট হিসেবে এ রেকর্ডটি করতে চেয়েছিলেন। এ ভ্রমণেই এ নারী বৈমানিক প্যাসিফিক অসিন বা, প্রশান্ত মহাসাগরের উপড় দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় বিমানসহ অদৃশ্য হয়ে যান। তাকে খোঁজার উদ্দেশ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর কোন হদিশ পাওয়া যায়নি। ১৯৩৯ সালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

Source: earharttruth.wordpress.com

Image courtesy: earharttruth.wordpress.com

তাঁর অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেক কারণ দেখানো হয়। কেউ কেউ দাবী করে সে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের একজন স্পাই ছিল এবং জাপানি সৈনিকরা তার বিমানকে নিচে নামাতে বাধ্য করে এবং তাকে বন্দী করে। কেউ কেউ দাবী করে সে মারা যাওয়ার অভিনয় করেছিল। আবার কিছু অতি উৎসাহী দল এটাও দাবী করে থাকে যে এলিয়েনরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে। অনেকে আবার বিশ্বাস করে আসলে তার বিমানের জ্বালানি শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং সমুদ্রে তার বিমানটি ক্র্যাশ করে। কিন্তু আসলে তার ভাগ্যে কী ঘটেছিল তা এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি।

গ্লেন মিলারের ইংলিশ চ্যানেলে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার কাহিনী

Source: usatoday.com

Image courtesy: usatoday.com

গ্লেন মিলার একজন অত্যন্ত চতুর, কৌশলী এবং দক্ষ বৈমানিক ছিলেন। ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৪৪। তিনি প্যারিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তার বিমানটি ইংলিশ চ্যানেলের উপড় গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। তার এ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া নিয়েও আছে অনেক অনেক কাহিনী।

ফ্লাইং টাইগার লাইন- অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আরেক রহস্যময় ঘটনা

ফ্লাইং টাইগার লাইন ফ্লাইট ৭৩৯ ছিল আমেরিকান মিলিটারির একটা প্লেন। প্লেনটি ১৯৬২ সালে অদৃশ্য হয়ে যায়। এতে ৯৩ জন আমেরিকান সৈনিক সহ ৩ জন দক্ষিণ ভিয়েতনামি ছিলেন। গুয়ামের অ্যান্ডারসন এয়ারফোর্স বেসে বিমানটি পুনরায় জ্বালানি ভরার জন্য থামে। তারপর এটি আবার ফিলিপাইনের ক্লার্ক এয়ার বেসের দিকে রওনা দেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় তাদের শেষ গন্তব্যে তারা আর কখনই পৌঁছাতে পারেননি। পাইলট কোন রকম বিপদ সংকেতও কখনও পাঠায়নি।

Source: mapsofworld.com

Image courtesy: mapsofworld.com

এ বিমানটি হারিয়ে গেলে অনেক বড় আকারে এটিকে খুঁজে বের করার জন্য অনুসন্ধান শুরু হয়। আমেরিকান মিলিটারির এ যজ্ঞে প্রায় ১৩০০ মানুষ যুক্ত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শির বর্ণনা মতে তারা আকাশে সে সময় তারা উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি দেখেছিলেন যেখানে প্লেনটির থাকার কথা ছিল তার আশে পাশে।

বি৪৭ স্টার্টোজেট

Source: forum.kerbalspaceprogram.com

Image courtesy: forum.kerbalspaceprogram.com

এই রহস্যময় ঘটনাটি ছিল আমেরিকা সরকারের একটি বোম্বার প্লেন হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা। তখন ছিল  ১৯৫৬ সলের মার্চ মাস। বি৪৭ প্লেনটি ভূমধ্যসাগর অতিক্রমের সময় হারিয়ে যায়। প্লেনটি সাধারণ কোন প্লেন ছিল না। এতে ছিল অনেক নিওক্লিয়ার অস্ত্র। এর মাঝে কিছু নিউক্লিয়ার ওয়্যারহেডও ছিল। এসবের দাম ছিল মিলিয়ন নিলিয়ন ডলার। এ বিমানে তিনজন বিমান বাহিনীর অফিসারও ছিলেন। এ বিমানের কোন কিছুই আর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিমানের ক্রু, বর্জ্য কিংবা মিসাইলগুলো সব চিরতরে হারিয়ে গেল।

অ্যায়ের লিঙ্গাস ফ্লাইট ৭১২

২৪ মার্চ, ১৯৬৮। অ্যায়ের লিঙ্গাস ফ্লাইট ৭১২ নামের আয়ারল্যান্ড থেকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে যাওয়ার বিমানটি সমুদ্রে ক্র্যাশ করে।

Source: en.wikipedia.org

Image courtesy: en.wikipedia.org

কিন্তু যখন অনুসন্ধানকারিরা এ ক্র্যাশের ঘটনাটি ভালভাবে বিশ্লেষণ করে তারা এ ধরণের ঘটনার কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পেলেন না। তাদের মনে হয়েছিল অস্বভাবিক কিছু প্লেনটিকে নিচে ফেলেছে। সেই বছরেই বেশ কয়েকজন নিজেদের এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শি হিসেবে দাবি করেন এবং বলেন একটা পরীক্ষামূলক ব্রিটিশ মিসাইল দ্বারা এ প্লেনটি নিচে ফেলা হয়েছে। যদিও ব্রিটিশ সরকার সর্বদাই বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছেন। এ বিমানে ৬১ জন যাত্রী ছিলেন যাদের সবাই মারা যান। এ বিমান দুর্ঘটনার রহস্যময় কারণটি আজও অজানাই রয়ে গেছে।

বিএসএএ স্টার ডাস্ট এবং রহস্যজনক মোর্স কোড

Source: en.wikipedia.org

Image courtesy: en.wikipedia.org

বিএসএসএ স্টার ডাস্ট একটি এক প্রকার সাধারণ বোম্বার প্লেন ছিল। ১৯৪৭ সালের ২ আগস্ট বুয়েন্স আয়ার্স থেকে সান্টিয়াগো যাওয়ার সময় এটি অদৃশ্য হয়ে যায়। সাথে সাথে অসংখ্য রহস্যের জন্ম দিয়ে যায়। এটি তার গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারলেও অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগে এর রেডিও অপারেটার শেষ একটি মোর্স কোড পাঠিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মোর্স কোডটি ছিল- “STENDEC”. এ ম্যাসেজটি ২ বার পাঠানো হয়েছিল। অনেকেই এ প্লেনকে ঘিরে এলিয়েন অ্যাটাকের গল্প তৈরি শুরু করেন। প্রায় ৫০ বছর রহস্যে রাখার পর অনুসন্ধানী দল বের করেন খারাপ আবহাওয়ার জন্য এ দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তবে “STENDEC” শব্দটির কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। অনেকেই মনে করেন রেডিও অপারেটার DESCENT শব্দকে ভুল করে STENDEC লিখেছিলেন। লক্ষ্যণীয় যে, শব্দ দুটি একই বর্ণগুলো দিয়ে তৈরি।

এরকম আরো অনেক অনেক অ্যারোপ্লেন দুর্ঘটনা আছে যা আজও অ্মীমাংসিত বা, আংশিকভাবে মিমাংসিত। ২০১৪ সালেই মালয়েশিয়ার প্লেনটির কথা এখনও আমাদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। সেসব নিয়ে আরেকদিন গল্প করা যাবে। আজ এ পর্যন্তই। ধন্যবাদ।

Related Articles