Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জেল পালানোর এক সুনিপুণ কারিগরের গল্প

তিনি ছিলেন এক সুনিপুণ শিল্পী। তা যে খুব ভালো কাজে নয় তা গল্পের শিরোনাম থেকে নিশ্চয় বুঝে গিয়েছেন। জেলে প্রবেশ ছিল তার নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। জেলে ঢোকা যেমন তার নেশা ছিল, তেমনি জেলের গারদ ভাঙাই যেন ছিল তার পেশা। জেল পালানোর নানা উপায় জানা ছিল তার। পৃথিবীতে এমন কোন কারাগার ছিল না যেখানে তাকে আটকে রাখা যায়। সারা জীবনে ভেঙেছেন একের পর এক জেল। চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য একাধিকবার জেলে পাঠানো হলেও প্রতিবার নানা উপায়ে সেখান থেকে পালিয়েছেন তিনি। কেবল তার জন্যই নিশ্ছিদ্র কারাগার তৈরি করা হয়। সেখান থেকেও পালিয়ে যান তিনি। এমনকি কবে, কখন, কীভাবে পালাবেন সে কথা আগেই নিরাপত্তা প্রহরীদের জানিয়ে দিতেন তিনি। তারপরও তাকে জেলে আটকে রাখা যায়নি।

কে সেই ব্যক্তি? যাকে আটকে রাখা যায়নি কোন কারাগারে! কতবার তিনি করেছেন এই কাজ? কেন সারা পৃথিবী জুড়ে তাকে নিয়ে এতো হৈ চৈ? জানতে চান? তবে আসুন জেনে নিই সেই রোমহর্ষকর গল্পের কাহিনী।

মুনডাইন জো

মুনডাইন জো

সে এক মজার ইতিহাস। অনেককাল আগের কথা। ১৮২৬ সালে ইংল্যান্ডের করনোওয়ালে জোসেফ বলিথো জন্স নামের এক শিশুর জন্ম হয়। সে ছিল বাবা মায়ের ছয় সন্তানের মধ্যে তৃতীয়। বাবার নাম থমাস জোন্স, আর মায়ের নাম ছিল মেরি বোলিথো। থমাস ছিলেন একজন কামার। পরিবারে তেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না।

দরিদ্র বাবা-মায়ের সংসারে সে যে খুব সুখে ছিল না তা তো বলাই বাহুল্য। খাওয়ার জন্য সন্তানের কান্না বাবা-মাকে বেদনার্থ করেছে সত্য, কিন্তু পরক্ষণেই সন্তানের উপর তীব্র আঘাত ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল সন্তানের ক্ষুধার তাড়না। কাদঁতে কাদঁতে সে দুধের শিশু একসময় ঘুমিয়ে পড়তো। একসময় ছোট্ট শিশুটি বড় হতে লাগলো। সে ছিল অত্যন্ত ভদ্র এবং নম্র। শিক্ষার আলো না পেলেও গ্রামের সবার প্রতি তার সদ আচরণ, ব্যবহারের জন্য সকলে তাকে বেশ পছন্দ করতো। পিতা থমাস জোন্স মারা যাওয়ার পর জোসেফ এবং তার তিন ভাই কাজের আশায় অষ্ট্রেলিয়ায় চলে আসে এবং সেখানে এক খনিতে কাজ নেয়।

নিজের এবং পরিবারের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য আনার জন্য ছোটবেলা থেকেই চুরি-ডাকাতিতে হাত পাকাতে থাকে জোসেফ। এসব বিষয়ে তার আত্মবিশ্বাস ছিল অবিশ্বাস্য। তার গ্রামের আশেপাশের লোকেরা বলতো যে, এমন আত্মবিশ্বাস নাকি সচরাচর দেখা যায় না। এক সময় চুরি ডাকাতি করতে গিয়েই ধরা পড়তে থাকে জোসেফ। ১৮৪৮ সালে জোসেফ তার জীবনের প্রথম চুরিটি করে। রিচার্ড প্রাইস নামক এক বিত্তশালীর বাসা থেকে তিন পিস পাউরুটি, এক পিস বেকন, কিছুটা পনির এবং শীতের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিছু গরম জামাকাপড়।

মূলত: ক্ষুধার তাড়নায় প্রথম চুরিটি করলেও তার বিরুদ্ধে ঘরে সিঁদ কেটে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির অভিযোগ আনা হয়। বিচারক জোসেফের বিরুদ্ধে ১০ বছরের কারা অন্তরীণের রায় প্রদান করে। তাকে জেলে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু জেলে তাকে আটকে রাখা যায়নি।  কারারক্ষীদের চোখেকে ফাঁকি দিয়ে সে জেল থেকে পালিয়ে যায়। জনশ্রুতি আছে, কবে, কখন, কোন রাস্তা দিয়ে পালাবে, তা নাকি আগে থেকেই জেলে নিয়োজিত প্রহরীদের জানিয়েই রাখতো জোসেফ। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে, সবার চোখে ধুলো দিয়ে ঠিক জেল থেকে উধাও হয়ে যেতো। তবে একথা একবাক্যে স্বীকার সকলে স্বীকার করতো যে, কারাগারে সে কয়েদী থেকে শুরু করে প্রহরী, এমনকি জেলে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সাথেও সে চমৎকার ব্যবহার করতো। জোসেফের কর্মকান্ড সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে অস্ট্রেলিয়া পুলিশকে।

মুনডাইন জো “এস্কেপ-প্রুফ” সেল

মুনডাইন জো “এস্কেপ-প্রুফ” সেল

এভাবে শুরু হয় তার চোর-পুলিশ খেলা। চুরি-ডাকাতি করে জেলে যায় , আর অদ্ভুত সব উপায়ে সে জেল থেকে বের হয়ে আসে। ইংল্যান্ডে জন্ম হলেও তার চুরি-ডাকাতির ব্যাপ্তি ছিল পশ্চিম অষ্ট্রেলিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত। এই চোর-পুলিশ খেলায় সে এতোই পটু হয়ে উঠে যে, অস্ট্রেলিয়ার পুলিশদের সে নানাভাবে ঘোল খাইয়ে ছাড়তো। সে কতবার জেলে গিয়েছে এবং জেল থেকে পালিয়েছে তার সঠিক হিসেব তার কাছ থেকেও পাওয়া যায়নি। পুলিশের কাছ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার জন্য ‘মুনডাইন জো’ ছদ্মনামে সারা ইউরোপে তার ক্রাইম চালাতে শুরু করে। পরবর্তীতে এই ছদ্মনামেই তিনি বিখ্যাত হন।

যতবারই ধরা পড়েছেন অস্ট্রেলিয়া পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি বেশ কয়েকবার জেল ভেঙে পালিয়েছেন জো। এহেন বুদ্ধিমান চোরকে জব্দ করতে একবার অষ্ট্রেলিয়ান পুলিশ নিশ্চিদ্র কারাগার তৈরি করে। কারাগার প্রস্তুত হওয়ার পর বিশেষ অভিযান চালিয়ে মুনডাইনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে সেই নিশ্ছিদ্র কারগারে নেওয়া হয়। এটা তার জন্য একটি পরীক্ষা ছিল। কারা কর্তৃপক্ষ দেখতে চেয়েছিলেন যে, জো পালাতে পারে কিনা। কিন্তু সেই জেলও ভেঙে পালিয়ে যান মুনডাইন।

মুনডাইন জো গেট এর অবশিষ্টাংশ যা সে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিল

মুনডাইন জো গেট এর অবশিষ্টাংশ যা সে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করেছিল

জো জীবনে থিতু হওয়ার আশায় লুইসা হিয়ার্ন নামের এক মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কাজের আশায় তারা সাউদার্ন অষ্ট্রেলিয়ার দিকে চলে যান। কিন্তু সেখানেও সে তার অপরাধ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেনি। জেলে থাকাকালীন বিভিন্ন সময়ে জো মুনডাইন পালানোর জন্য নানা উপায় অবলম্বন করতেন। তার মধ্যে কখনো জেলের দেয়ালে গর্ত করে, কখনো বা কয়েদিদের সাথে কাজ করার সুবাদে জেলের দেয়াল টপকে, আবার কখনো বা জেলের তালা ভেঙে। প্রতিবারই অদ্ভুত অদ্ভুত সব উপায় অবলম্বন করে জো সহজেই জেল থেকে পালাতে সক্ষম হতেন।

বেড়া এবং কুয়োর অবশিষ্টাংশ যা মুনডাইন জো পালাতে ব্যবহার করেছিল

বেড়া এবং কুয়োর অবশিষ্টাংশ যা মুনডাইন জো পালাতে ব্যবহার করেছিল

প্রৌঢ়ত্বে এসে মুনডাইন অবশ্য চুরি ডাকাতি ছেড়ে দেন। সঙ্গে ছেড়ে দেন জেল ভাঙার কাজও। ক্রমশ তার শরীর ভাঙতে থাকে। এক সময় পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলেও যান। কিন্তু তার সম্পর্কে প্রচলিত গল্পগুলো থেকেই যায়। ১৩ আগস্ট ১৯০০ সালে মারা যাওয়ার আগে জো সৃষ্টি করে যান জেল ভাঙার এক অভাবনীয় রেকর্ড। তিনি জেলভাঙার যে নজির গড়ে তুলেছিলেন, ১১৬ বছরেও তা এখনো অটুট! অনেকে তার এই রেকর্ড ভাঙার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু জেলভাঙার ইতিহাসে তিনি হয়ে গিয়েছেন মিথ।

মুন ডাইন জো বার এন্ড রেস্টুরেন্ট

মুন ডাইন জো বার এন্ড রেস্টুরেন্ট

তাকে নিয়ে যেমন তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র, তেমনই রচিত হয়েছে অসংখ্য গল্প, কবিতা ও উপন্যাস। কী হয়নি তাকে নিয়ে! একটি স্টেশনের সাইডিং-ও হয়েছে তার নামে। প্রতি বছর মে মাসের প্রথম রবিবার টুডে শহরতলির লোকেরা মুনডাইন ফেস্টিভ্যাল পালন করেন।

“দ্যা লিজেন্ড অফ মুন ডাইন জো”- একটি ফিকশান বই যা ২০০২ সালে “ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান প্রিমিয়ার বুক পুরস্কার” পেয়েছে।

“দ্যা লিজেন্ড অফ মুন ডাইন জো”- একটি ফিকশান বই যা ২০০২ সালে “ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ান প্রিমিয়ার বুক পুরস্কার” পেয়েছে।

মানুষের জীবন বড়ই অদ্ভুত। ভালো ও মন্দ দুই পাশাপাশি হাত ধরে চলে। ঠিক তেমনি এক চরিত্র জো মুনডাইন। ক্ষুধা এবং অর্থ কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রথম দিকে যে চুরি সে শুরু করে পরবর্তীতে তা বৃহৎ চুরিতে পরিণত হয়। জোর সাহস এবং বুদ্ধি বারবার জেল থেকে পালাতে সাহায্য করেছে। তবে, প্রতিবারই জেল থেকে বের হয়ে সে নব উদ্যোমে আবার অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তেন। কিন্তু কোন জেলই তাকে ধরে রাখতে পারেনি। আর তাইতো ১১৬ বছর পরেও জেল থেকে পালানোর সে রেকর্ড এখনো অটুট।

This article is in Bangla Language. It's about Moondyne Joe- story of a prison breaker.

Image Sources & References:

  1. http://www.moondynejoes.com.au/the-legend/
  2. http://www.wanowandthen.com/Moondyne-Joe.html http://www.moondynefestival.com.au/history.php

Related Articles