Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত সম্পদ চুরির কাহিনী

১৯৯০ সালের ১৮ মার্চ তারিখ, দিবাগত রাত। ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়াম এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই সিকিউরিটি গার্ড যাদুঘরের ভেতরে ঢুকতে দেয় দুই ‘পুলিশ অফিসার’কে। কিছুক্ষণ পরে সেই দুই ‘পুলিশ অফিসার’ হাত পা বেঁধে ফেলে সেই দুই গার্ডের, আর যাদুঘর থেকে বের করে নেয় ১৩ টি শিল্পকর্ম, এরপর সেগুলো তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে হারিয়ে যায় চিরতরে। ৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের এই তেরটি শিল্পকর্ম যেখানে রাখা ছিল সেই গার্ডনার মিউজিয়ামটি আসলে একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা যাদুঘর। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রাইভেট প্রোপার্টি বা ব্যক্তিগত সম্পদ চুরির ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এই ঘটনাটি ঘটিয়েছিল ঐ দুই ‘পুলিশ অফিসার’।

isabella03-full

ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়ামের একাংশ

এফবিআই সহ বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এই চুরির রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করলেও বিফল হয়েছে সবাই। এই প্রায় ২৭ বছরেও একটি মানুষকেও গ্রেফতার করা যায়নি চুরির দায়ে, কিংবা উদ্ধার করা যায়নি একটি শিল্পকর্মও। কেইসটা এখনও তদন্তাধীন, যাদুঘর কর্তৃপক্ষ ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে এই শিল্পকর্মগুলো উদ্ধার করার মত যে কোনো তথ্যের বিনিময়ে! কারা ছিল সেই ‘পুলিশ অফিসার’ এর ছদ্মবেশে দুই সদস্যের ডাকাতদল, সে প্রশ্নের উত্তর আজও মিলেনি।

ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার (১৮৪০-১৯২৪) ছিলেন একজন শিল্পসংগ্রাহক। তার নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বোস্টনের এই যাদুঘরটি। ডাচ স্বর্ণযুগের বিখ্যাত শিল্পী ইয়োহান ভার্মির এর শিল্পীজীবনে আঁকা মাত্র ৩৪ টি ছবির একটি ‘দ্য কনসার্ট’ ছিল সেই চুরি যাওয়া শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে। কেবল ‘দ্য কনসার্ট’ এর আর্থিক মূল্যই ২০ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ের আরেক বিখ্যাত শিল্পী রেমভ্রান্ট এর আঁকা একমাত্র সাগরের ছবি ‘দ্য স্টোর্ম অন দ্য সি অব গ্যালিলি’ও চুরি হয়ে যায় তখন। এছাড়া এডগার ডেগাস, এডুয়ার্ড ম্যানেট ও গোভার্ট ফ্লিংক এর মত শিল্পীর আঁকা ছবিও ছিল চুরি যাওয়া সম্পদের তালিকায়।

Vermeer_The_concert

ইয়োহান ভার্মির এর ‘দ্য কনসার্ট’

১৯৯০ সালে ১৮ মার্চ ছিল রবিবার। আগের দিন ১৭ তারিখ ছিল ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় শোক ও একই সাথে ভোজ উৎসবের দিন ‘সেইন্ট প্যাট্রিক ডে’। ১৮ মার্চের দিবাগত রাতের শুরুতে একটি লাল রঙের ডজ ডায়াটোনা মডেলের গাড়ি এসে থামল প্যালেস রোডে, ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়ামের একপাশের প্রবেশমুখের কাছাকাছি। তখনও কাছের এক সেইন্ট প্যাট্রিক ডে’র উৎসব থেকে বাড়ি ফিরছে লোকজন। চারপাশ নীরব হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা গাড়িতে অপেক্ষা করল ভেতরের পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুজন।

রাত ১ টার কিছুক্ষণ আগে যাদুঘরের একজন সিকিউরিটি গার্ড রিচার্ড অ্যাবাথ পুরো যাদুঘর একবার টহল দিয়ে এল নিচের ফ্রন্ট ডেস্কের ওখানে, আরেকজন গার্ডের সাথে জায়গা বদল করার জন্য। পুরো মিউজিয়ামে সে সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে কেবল মাত্র এ দুজন। এমন সময় অ্যাবাথ যাদুঘরের প্যালেস রোডের দিকের প্রবেশমুখের দরজাটি একবার খুলে খুব দ্রুততার সাথে আবার বন্ধ করল। অনেকেই ভাবতে পারেন এটাই হয়ত কিছুক্ষণ পরে ঘটতে যাওয়া ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত এক চুরির জন্য সিকিউরিটি গার্ড অ্যাবাথের চোরদের উদ্দেশ্যে সহায়তামূলক ইশারা। কিন্তু পরবর্তীতে অ্যাবাথ বলে, সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই জানা যাবে যে, সে সব সময় এই কাজটা করত। দরজা খুলে আবার বন্ধ করে সেটার লক ঠিকঠাক আছে কিনা সেটা চেক করার জন্যই এই কাজটা সে করেছিল। পরবর্তীতে এফবিআই সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজগুলো খুঁটিয়ে দেখার পর এ ব্যাপারে আর কোনো মন্তব্য করেনি। অ্যাবাথ এর আগেও এই কাজটা করেছে, সম্ভবত তেমনটাই দেখা গেছে ফুটেজগুলোতে।

isabella01-full

গার্ডদের দেয়া বর্ণনা অনুসারে দুই চোরের স্কেচ

যাই হোক, রাত ১টা বেজে ২৪ মিনিটে দুজন লোক যাদুঘরের দরজার বাইরের বেল টিপল। ভেতর থেকে তাদের পরিচয় জানতে চাইল অ্যাবাথ। উত্তরে লোক দুটি জানাল, তারা পুলিশ অফিসার, এই জায়গায় একটা সমস্যার কথা শুনে তারা এসেছে এবং তাদেরকে যেন ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়। অ্যাবাথের এইটুকু জানা ছিল, কোনো অনাহুত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ের পরে আর যাদুঘরে ঢুকতে দেয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু সেটা যদি পুলিশ অফিসার হয় তাহলে কী করতে হবে সেটা তার জানা ছিল না। ভেতর থেকে সে দেখতে পাচ্ছিল লোকদুটোকে, পুলিশের ইউনিফর্ম পরা, পুলিশের ব্যাজও আছে সাথে। সেই মুহূর্তে একটা ঐতিহাসিক ভুল করে ফেলল রিক অ্যাবাথ, সে বিশ্বাস করল সে লোক দুটোকে। ডেস্কে থাক বোতাম চেপে দরজা খুলে সে তাদের ভেতরে ঢুকতে দিল। এরপর দুজন এগিয়ে এল ভেতরের দিকে, অ্যাবাথ তখন সিকিউরিটি ডেস্কের ভেতরে।

এমন সময়, সে দুজনের একজন হঠাৎ বলে উঠল, অ্যাবাথের চেহারাটা তার চেনা চেনা লাগছে। এবং এরপরই বলল, ঐ চেহারার লোকটার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, যে কোনো অবস্থায় তাকে পাওয়া গেলে গ্রেফতার করবে পুলিশ। অ্যাবাথের আইডি কার্ড দেখতে চাইল সেই পুলিশ, আর ঐ মুহূর্তে দুই হাত উপরে তুলে দেয়ালের দিকে ফিরে অ্যাবাথকে সিকিউরিটি ডেস্ক থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দিল।

অ্যাবাথ বুঝতে পারছিল কোথাও ভুল হচ্ছে, সেই পুলিশ তার চেহারা অন্য কোনো দাগী আসামীর সাথে মিলিয়ে ফেলছে। তবুও, ব্যাপারটা পরে বোঝানো যাবে এই ভেবে ঐ মুহূর্তের ঝামেলা সামাল দেয়ার জন্য পুলিশের কথামত দু হাত উপরে তুলে দেয়ালের দিকে ফিরে বেরিয়ে এল অ্যাবাথ। সেটাই হল তার দ্বিতীয় ঐতিহাসিক ভুল। কারণ সিকিউরিটি ডেস্কের ভেতরেই ছিল পুলিশের থানায় খবর পৌঁছে দেয়ার অ্যালার্ম বাজানোর বেলটা। সে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে তার দুহাত পিছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দিল ঐ দুজন। হ্যান্ডকাফ পরানোর ঠিক পরপরই অ্যাবাথ ধরতে পারল ব্যাপারটা। কারণ পুলিশের নিয়ম হল, আত্মসমর্পণকারীকে হ্যান্ডকাফ পরানোর আগে তার শরীর সার্চ করে কোনো অস্ত্র আছে কিনা তা দেখা। এই দুজন সেটা করেনি। তার উপর আবার অ্যাবাথের চোখে পড়ল, দুজনের একজনের গোঁফটা আসলে মোমের তৈরি, হুট করে দেখলে বোঝা যায় না।

ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যাবাথের আরেক সহযোগী গার্ড এল, তাকেও ধরে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়া হল। সেই গার্ডটি তখনও বোঝেনি। দুজন পুলিশ অফিসার দেখে সে জানতে চাইল কেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এবারে লোক দুটি ফাঁস করল গোমর। তারা আসলে পুলিশ অফিসার নয়। তারা চোর। এসেছে যাদুঘরে চুরি করতে। এই বলে দুই গার্ডকে তারা নিয়ে গেল মিউজিয়ামের নিচের বেজমেন্টে। সেখানে ইলেকট্রিক বক্সের সাথে তাদের হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে আটকে রাখা হল। দুজনের হাত, পা আর মাথায় পেঁচিয়ে দেয়া হল ডাক্ট টেপ, সেটা এতই শক্তিশালী টেপ, ওটা দিয়ে বাঁধা অবস্থা থেকে নিজ চেষ্টায় মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব।

Gardner-Museum-Heist-Security-guard-tied-duct-taped-basement

এই অবস্থায় সকালে রিক অ্যাবাথকে উদ্ধার করে পুলিশ

এর পরের ঘটনাগুলো ঘটে গেল দ্রুত। মিউজিয়ামে মোশন ডিটেক্টর লাগানো থাকায় ডাকাতদ্বয়ের পদচারণার শব্দ রেকর্ড হয় তাতে। সেগুলো শুনেই বোঝা যায় এরপর কী করেছিল এ দুজন। গার্ডদের বেঁধে রাখার পর দুজনে উপরে উঠে প্রথমে গেল যাদুঘরের ‘ডাচ রুম’ এ। তাদের একজন এগিয়ে গেল রেমভ্রান্ট এর আঁকা ‘সেলফ পোর্ট্রেট’ এর দিকে। একটা ছোট অ্যালার্ম বেজে উঠলেও সাথে সাথে সেটা ভেঙে চুরমার করে দেয়া হল। দেয়াল থেকে ছবিটি নামিয়ে এর ভারী ফ্রেম থেকে ছবির কাঠের প্যানেলটি বের করে আনার চেষ্টা করল তারা। কিন্তু কাজটা কঠিন হওয়ায় ছবিটা মেঝেতেই ফেলে রেখে বাকিগুলোর দিকে এগিয়ে গেল দুজন। রেমভ্রান্ট এর ‘দ্য স্টর্ম অন দ্য সি অব গ্যালিলি’ ফ্রেম থেকে কেটে বের করে নিল। একই ভাবে বের করল ‘এ ল্যাডি এন্ড জেন্টলম্যান ইন ব্ল্যাক’ ছবিটি। এরপর তারা ফ্রেম থেকে বের করল ইয়োহান ভার্মিরের ‘দ্য কনসার্ট’ আর গোভার্ট ফ্লিংক এর ‘ল্যান্ডস্কেপ উয়িদ অ্যান ওবেলিস্ক’। এরপর তারা উঠিয়ে নিল চীনের শ্যাং আমলের একটি পাত্র।

Rembrandt_-_Self_portrait_etching_-_ISGM

রেমভ্রান্ট এর ‘সেলফ পোর্ট্রেট’

তারপর তারা যাদুঘর ঘুরে বের করল এডগার ডেগাস এর আঁকা পাঁচটি ছবি। দেয়ালে লাগানো একটা নেপোলিয়নের পতাকার খুঁটির মাথা থেকে নিল ব্রোঞ্জের তৈরি একটি ঈগলের ভাস্কর্য। চুরি করা শিল্পকর্মগুলো গাড়ি পর্যন্ত বয়ে নেওয়ার জন্য তাদেরকে মোট দুই বার আসা যাওয়া করতে হয়। সব মিলিয়ে পুরো কাজ সারতে তারা সময় নিয়েছিল ৮১ মিনিট। যাবার আগে আটকে রাখা গার্ডদের কাছে আবার গিয়েছিল দুই চোর। তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিল, “এক বছরের মধ্যেই তোমাদের সাথে আবার যোগাযোগ হবে।” কিন্তু আজ প্রায় ২৭ বছরেও তারা কারোর সাথেই যোগাযোগ করে নি।

the storm

রেমভ্রান্ট এর ‘দ্য স্টর্ম অন দ্য সি অব গ্যালিলি’

শুরুতেই বলেছি, চুরি যাওয়া এই ১৩টি শিল্পকর্মের মোট আর্থিক মূল্য ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে কেবল ইয়োহান ভার্মিরের ‘দ্য কনসার্ট’ এর মূল্যই ২০ কোটি ডলার, এটি ছিল এই মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠার একেবারে শুরুর দিকের সংগ্রহের একটি। ‘দ্য কনসার্ট’ হল পৃথিবীর চুরি যাওয়া শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দামী। ব্রোঞ্জের তৈরি ঈগলের ভাস্কর্যটি চোরেরা হয়ত স্বর্ণের মনে করেছিল। যাদুঘর কর্তৃপক্ষ কেবল এই ভাস্কর্যের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে ১ লক্ষ ডলার।

eagle_met

ব্রোঞ্জের ঈগলের ভাস্কর্য

এফবিআই এর বক্তব্য অনুসারে, চুরি যাওয়া শিল্পকর্মগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে যাদুঘর থেকে অনেক দূরে কোথাও এবং ২০০০ সালের শুরুর দিকে ফিলাডেলফিয়াতে একবার সেগুলো বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছিল। এফবিআই ধারণা করছে চোরেরা ছিল বড় কোনো অপরাধী চক্রের সদস্য যাদের কেন্দ্র মূলত নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভানিয়া, ডেলাওয়ার, ম্যারিল্যান্ড, ওয়াশিংটন ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া নিয়ে গড়ে ওঠা ‘মিড-আটলান্টিক’ অঞ্চল এবং কানেকটিকাট, মেইন, ম্যাসাচুসেটস, নিউ হ্যাম্পশায়ার, রোড আইল্যান্ড ও ভার্মন্ট নিয়ে গরে ওঠা ‘নিউ ইংল্যান্ড’ অঞ্চলের কোথাও।

তার মানে ব্যাপারটা দাঁড়ালো, চোর ও চুরি যাওয়া শিল্পকর্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ১৩টা স্টেটের যে কোনোটায় বা সবগুলোতে ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় থাকতে পারে, এবং এসব জায়গায় চিরুনী অভিযান চালিয়ে এই অমূল্য শিল্পকর্মগুলো উদ্ধার করা একরকম অসম্ভব ব্যাপার! দুজনের ব্যাপারে অবশ্য এফবিআই এর সন্দেহ ছিল যে এরা চুরির সাথে কোনো ভাবে জড়িত। তাদের একজন ববি ডোনাটি ১৯৯১ সালে চলতে থাকা গ্যাং ওয়ারে নিহত হয়। শিল্পকর্মগুলো কোথায় আছে সে ব্যাপারে যার কাছে তথ্য আছে বলে ধারণা করা হয়েছিল সেই আরেক সন্দেহভাজন, কানেকটিকাটের গ্যাংস্টার রবার্ট জেনটাইল, এই চুরির সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

চুরি হওয়া শিল্পকর্মগুলোর স্মরণে আর এগুলো হয়ত কোনো দিন ফিরে আসবে এমন বিশ্বাসে এদের ফ্রেমগুলো ফাঁকা রাখা হয়েছে মিউজিয়ামে। একই সাথে চোর যেখানেই থাকুক না কেন, এগুলো যাতে যত্নের সাথে সংরক্ষণ করে সেজন্য কিছু অবশ্য করণীয় বলে দিয়েছেন মিউজিয়ামের পরিচালক্ম অ্যানি হলে। তিনি চোরদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, এগুলো সংরক্ষণ করতে হবে অন্তত ৫০ শতাংশ আর্দ্রতা সম্পন্ন পরিবেশে যার তাপমাত্রা হবে ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ২১.১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খেয়াল রাখতে হবে এগুলো যেন সূর্যালোক থেকে দূরে থাকে এবং এগুলো রাখার জন্য যেন অ্যাসিড ফ্রি পেপার ব্যবহৃত হয়। অ্যানি হলে আরও জানান, ছবিগুলো রোল করে বটে রাখা যাবে না, তাতে এগুলো ভেঙে যাবে। এই নিয়মগুলো না মানলে ছবির গুণ নষ্ট হয়ে যাবে। রঙ ভালো রাখার জন্য দক্ষ কারিগর দিয়ে ছবিতে প্রয়োজন অনুযায়ী রঙের প্রলেপও দিতে হবে।

Empty_Frames_at_Isabella_Stewart_Gardner_Museum

চুরি হওয়া শিল্পকর্মের ফাঁকা রেখে দেয়া ফ্রেম

শেষ করছি এই বিশাল চৌর্যবৃত্তিটি কীভাবে রহস্যজনক ঘটনায় পরিণত হল তেমন কয়েকটি প্রশ্ন দিয়ে। তদন্তকারী বিশেষজ্ঞরা একরকম ধাঁধাঁয় পড়ে গেছেন একটা জায়গায়, সেটা হল, চুরির সময় ওই চুরি হওয়াগুলোর চেয়েও দামী দামী শিল্পকর্ম ছিল যাদুঘরে। চোরেরা কেন সেগুলো বাদ দিয়ে কেবল ঐ তেরটিই বেছে নিল, সেটাই একটা রহস্য। এর পরের রহস্যটি আরও ভয়ানক, ঘটনার প্রায় দুই যুগ পরে ২০১৫ সালে পুলিশের প্রকাশ করা একটি সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে দেখা যায়, আগের রাতে, চুরির ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগে, সিকিউরিটি গার্ড রিক অ্যাবাথ ডেস্কে থাকা প্রবেশ দরজা খোলার সুইচ টেপার পর সাধারণ পোশাকের একজন লোক যাদুঘরে ঢুকেছে যে কিছুক্ষণ পর আবার বের হয়ে যায়। ঠিক সে সময় বাইরে অপেক্ষায় থাকা গাড়িটিও ছিল সেই ডজ ডায়াটোনা। প্রশ্ন আসে, ঠিক ১ দিন আগে কি সেই লোক এসেছিল পুরো চুরির ব্যাপারটা একবার রিহার্সেল করার জন্য? রিক অ্যাবাথ জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানায় সে মনে করতে পারছে না কে এই লোক।

07GARDNER2-master1050

আগের রাতের ভিডিও ফুটেজের অচেনা সেই লোক

আইনের কোনো ধারায় আসলে অ্যাবাথকেও ঠিক এই চুরিতে সহায়তা করার জন্য দায়ী করা যায় না, কারণ ১ দিন আগে কোনো চুরি হয় নি, এবং চুরির রাতে চোরেরা এসেছিল পুলিশের পোশাকে। আর পুলিশকে ভেতরে ঢোকানোর জন্য তো তাকে দায়ী করা চলে না। মোশন ডিটেক্টরের রেকর্ড থেকে জানা যায়, যাদুঘরের ‘ব্লু রুমে’ দুবার আওয়াজ রেকর্ড হয়েছে। একবার ১২ টা বেজে ২৭ মিনিটে, পরের বার ১২ টা বেজে ৫৩ মিনিটে, আর এ দুবারই সেখানে শোনা গিয়েছে অ্যাবাথের পায়ের শব্দ, চোরদের নয়। তাহলে ব্লু রুম থেকে এডুয়ার্ড ম্যানেট এর আঁকা ‘শে টর্টনি’ চুরি করল কে? অবশ্য কোনো রকম শব্দ না করে চলাচল করার কৌশলও অবলম্বন করতে পারে চোরেরা। আর সবচেয়ে বড় রহস্য হল, ঘটনার দুই যুগ পর কেন সেই ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ করা হল? কিংবা চুরির পরপরই কেন অ্যাবাথকে এই ভিডিও ফুটেজের এক রাত আগের ঘটনা নিয়ে পর্যাপ্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য উদ্ধার করা হল না? এদিকে ঘটনার ৫ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর আইনগতভাবে আর অ্যাবাথকেও কোনো ভাবে এই অপরাধের জন্য দায়ী করা সম্ভব নয়।

cavanaugh_17gardner5_metro

রিক অ্যাবাথ, ২০১৫ সালে

ছবি সংরক্ষনের যত কঠিন নিয়মকানুন, চোর যদি উঁচু মাপের শিল্পবোদ্ধা না হয়, তাহলে এত যত্ন এত দিন ধরে সে নিয়েছে কি না কে জানে। সব প্রশ্নের উত্তর আদৌ কখনও পাওয়া যাবে নাকি অমূল্য সব শিল্পকর্ম চিরতরে উধাও অবস্থাতেই রয়ে যাবে… জানার অপেক্ষায় আছে পৃথিবীর শিল্পপ্রেমী মানুষেরা।

 

This article is in Bangla language. It's about isabella stewart gardner museum heist.

References:

1.http://archive.boston.com/news/local/massachusetts/2013/03/09/guard-who-opened-the-door-robbers-notorious-gardner-museum-heist-under-suspicion-years-later/J9cyv9A0rRkJ1t0OYpwdvL/story.html

2.http://www.thedailybeast.com/articles/2015/08/13/tipsters-we-know-gardner-heist-thief.html

3. https://www.bostonglobe.com/metro/2015/08/06/gardner-guard-never-made-secret-his-part-story-heist/RjZhPm869NIlwVp08fMpWP/story.html

Featured Image: mirror.co.uk

 

 

Related Articles