Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নিউইয়র্কের হাইডসভিল: আধুনিক প্রেতচর্চার আঁতুড়ঘর

ভুতুড়ে বাড়ির কখনো দেখা পেয়েছেন? এই পৃথিবীর অনেক দেশেই দেখা মিলবে অদ্ভুত যতসব ভুতুড়ে বাড়ির। তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় ভুতুড়ে বাড়ির অস্তিত্ব পাওয়া যাবে ইংল্যান্ড ও আমেরিকাতেই। আরো বেশি আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এসব বাড়ির অনেকগুলাই পরবর্তীতে ব্যবহৃত হয়েছে আধ্যাত্মিকতা ও প্রেতচর্চার কেন্দ্র হিসেবে। এমনি এক ভুতুড়ে বাড়ি নিউইয়র্কের হাইডসভিল কটেজ। কিন্তু এ বাড়িতে ভুতের অস্তিত্ব আসলেই ছিল কিনা তা জানতে হলে আমাদেরকে একটু ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরাতে হবে।

নিউইয়র্কের হাইডসভিল কটেজ

নিউইয়র্কের হাইডসভিল কটেজ

আনুমানিক ১৮১৫ সালে ড. হাইড নামে একজন ব্যক্তি হাইডসভিল কটেজ নির্মাণ করেন। পরে তার সন্তান এর উত্তরাধিকারী হন। বেশ কয়েকবার এ বাড়ির মালিকানা বদল হয়ে সবশেষে জন ফক্স এই বাড়ির মালিকানা লাভ করেন। বর্তমানে ফক্স হাউস নামেই এটি অধিক পরিচিত।

১৮৪৭ সালের ১১ ডিসেম্বর জন ফক্স তার পরিবার সমেত এই বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। জন ফক্স ছিলেন একজন কামার ব্যবসায়ী। তিনি তার ব্যবসায় প্রভুত উন্নতি করেন। কিন্তু তার একটা বদঅভ্যাস ছিল। তিনি প্রায় সময় এলকোহলে আসক্ত থাকতেন। ফলে ব্যবসায় লস করতে থাকেন। এক সময় পরিবারকে নিয়ে থিতু হওয়ার আশায় খুব কম মূল্যেই হাইডসভিল কটেজটি কিনে নেন। জন ফক্স, তার স্ত্রী মার্গারেট আর তাদের দুই মেয়ে ম্যাগী ও কেটিকে নিয়ে এ বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। তখন মার্গারেটের বয়স ১৫ আর কেটির বয়স ১১।

ডেভিড ফক্স ও তার স্ত্রী মার্গারেট তার স্ত্রী মার্গারেট ফক্স

ডেভিড ফক্স ও তার স্ত্রী মার্গারেট তার স্ত্রী মার্গারেট ফক্স

বাড়িটি কেনার সময়ই এলাকার আশেপাশের অনেক লোকই জনকে বাড়িটি কিনতে নিষেধ করেন। কেননা প্রায় রাতেই নাকি বাড়িটি থেকে অদ্ভুত নানা আওয়াজ শোনা যায়। জন ব্যাপারটিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। তিনি ‘ভুতের বাড়ি’ ব্যাপারটা গুজব বলে উড়িয়ে দেন। সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে সন্ধান করতে লাগলেন ভুতের কোন ‘গন্ধ’ বা ‘অস্তিত্ব’ অনুভব করা যায় কিনা। কিন্তু বাড়িতে তিনি তেমন কিছু পাননি। বাড়িতে ঢোকার পর বেশ কিছুদিন ভালই কাটছিল ফক্স পরিবারের।

ম্যাগী ও কেটি ফক্স

ম্যাগী ও কেটি ফক্স

কিন্তু ঠিক তিন মাস পরেই ওই বাড়িতে ঘটতে লাগল ভৌতিক সব ঘটনা। ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসের এক রাতে ঘটেছিল অদ্ভুত এক ঘটনা।  রাতে শোনা যেতে লাগল নানারকম শব্দ। সিঁড়িতে, বেসমেন্টে কারো পায়ের শব্দ। দেয়ালে, ছাদে কেউ যেন হাতুড়ি পেটাচ্ছে এধরনের শব্দ হতে লাগল। এমনি অদ্ভুত সেই আওয়াজ যে, কেটি ভয়ে পাশের ঘরে না শুয়ে রাতে বাবা-মায়ের সাথে ঘুমাতে আরম্ভ করল।

অশরীরীর বিভৎস শব্দে সকলের ভয়ার্ত চেহারা

অশরীরীর বিভৎস শব্দে সকলের ভয়ার্ত চেহারা

প্রতিদিন রাত হলেই দরজায়, জানালায় আর টেবিলে ঠকঠক আওয়াজ। মিসেস ফক্স বাচ্চাদেরকে সাহস দেয়ার জন্য নানাভাবে চিৎকার চেঁচামেচি করে সে আওয়াজ দূর করতে চাইতেন। কিন্তু হল তা হিতে বিপরীত। ভুতুড়ে শব্দের তীব্রতা ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পেতে লাগল। সাথে যুক্ত হতে লাগল নতুন উপদ্রব। বাড়ির ফার্নিচারগুলো স্থানান্তরিত হওয়া, হঠাৎ কারো শীতল স্পর্শ অনুভুত হওয়া বা সিড়িতে বা হলরুমে কারো পায়ের ছাপ পুরো ব্যাপারটিকে আরো ভয়ঙ্কর করে তুলল। শেষে মিসেস ফক্স স্বীকারই করে নেন, বাড়িটি পোড়ো। এখানে অসুখী কোন আত্মা উপস্থিত। ঐ আত্মাকে শান্ত করতে না পারলে এ বাড়িতে থাকা অসম্ভব।

তারপর এক নিশুতি রাতে যখন এই আওয়াজ তীব্র হতে শুরু করে তখন মিসেস ফক্স তার সন্তানদের নিয়ে মোমবাতির আলোয় সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খোঁজ করতে শুরু করেন, কারো দেখা পান কিনা? কিন্তু তাদের এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। উল্টো তাদের এই খোঁজাখুঁজি অশরীরী মনে হয় বিরক্তিই বোধ করে, ফলে অদ্ভুত সেই আওয়াজের তীব্রতা দিন কে দিন বাড়তেই লাগে।

ভৌতিক আওয়াজের উত্তর দেয়া শুরু করেন ফক্স পরিবার

ভৌতিক আওয়াজের উত্তর দেয়া শুরু করেন ফক্স পরিবার

এই রকম পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন চলার পরেই ৩১ মার্চের রাতে সেসব ভৌতিক আওয়াজের উত্তর দেয়া শুরু করল কেটি ফক্স। ওই দিন রাতে সেই ভীতিকর শব্দ শুরু হতেই অন্ধকার ঘরে কেটি সেই অশরীরীকে ‘স্প্লিটফুট’ হিসেবে সম্বোধন করে তার উদ্দেশ্যে বলে উঠল, “মি. স্প্লিটফুট, আপনি যদি আমার কথা শুনতে পান তবে আমি যা করবো আপনিও তাই করবেন”। বলে কেটি শূন্যে হাততালি দিল বেশ কয়েকবার। সঙ্গে সঙ্গে শোনা গেল ঠিক ওইরকম হাততালির আওয়াজ। যেন প্রতিধ্বনি হতে লাগল। বোনের সাহস দেখে এবার এগিয়ে এল ম্যাগী। বলল, “না, ওরকম নয়। আমি যেরকম করব, আপনি ঠিক সেরকমই করবেন, মি. স্প্লিটফুট। গোনো এক, দুই তিন, চার।” ম্যাগী ঠিক চারবার হাততালি দিল। উত্তরও পাওয়া গেল সাথে সাথে।  অদৃশ্য মি. স্প্লিটফুট বারবার আওয়াজ করে এর প্রত্যুত্তর দিলেন।

অশরীরী আত্মার সাথে মিডিয়ামের মাধ্যমে কথোপকোথন

অশরীরী আত্মার সাথে মিডিয়ামের মাধ্যমে কথোপকোথন

মিসেস ফক্স এবার ওই অদৃশ্য শক্তিকে লক্ষ করে জানতে চাইলেন তার দুই মেয়ের বয়স। এই প্রশ্নের তৎক্ষণাৎ আওয়াজ করে মি. স্পিল্টফুট জানালেন ম্যাগী আর কেটির সঠিক বয়স। যার যত বয়স ঠিক তত আওয়াজ করলেন তিনি। এরপর কিছুক্ষণ চুপচাপ, আর তারপরই হলো এমন এক অদ্ভুত ব্যপার যা মিসেস ফক্স আশা করেননি। অদৃশ্য শক্তি আবার শুরু করলেন আওয়াজ। পরপর তিনবার। এই আওয়াজে মিসেস ফক্সের মনে পড়ে গেলো তার ছোট মেয়ের কথা, যে মাত্র তিন বছর বয়সে মারা গিয়েছিল। মি. স্পিল্টফুট জানিয়ে দিলেন সেই ছোট বাচ্চাটিরও বয়স।

এবার মিসেস ফক্স যেন আরো সাহসী হয়ে ওঠলেন।  জানতে চাইলেন, “আমার প্রশ্নের যিনি সঠিক উত্তর দিচ্ছেন, তিনি কি কোন মানুষ?” এবার আর কোন উত্তর পাওয়া গেল না।

মিসেস ফক্স আবার প্রশ্ন ছুড়লেন,“আপনি যদি কোন প্রেতাত্মা হন তাহলে দুবার আওয়াজ করুন।” বলামাত্র পরপর ঠিক দুটো আওয়াজ হল।

তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, “কারো আঘাতে কি আপনার মৃত্যু হয়েছে?” এবারও উত্তর এলো হ্যাঁ সূচক।

“যিনি আপনাকে হত্যা করেছেন সে কি এখনও জীবিত?” এবারও অশরীরী আত্মা জানান দিল যে, হত্যাকারী বেঁচে আছে।  এইভাবেই চলতে লাগলো প্রেতাত্মার সাথে মানুষের কথোপকোথন।

ভুতুড়ে বাড়ি

ভুতুড়ে বাড়ি

এই ঘটনার পরে ফক্স ফ্যামিলি আশে পাশের বাসিন্দাদের থেকে জানতে চান এ বাড়ি সম্পর্কে। তারা জানতে পারেন যে, তারা ওই বাড়িতে আসার বছর পাঁচেক আগে ওখানে খুন হয়েছিলেন এক হকার। ঘটনাটি ঘটেছিল কোন এক মঙ্গলবার রাতে।  সেই হকারের লাশ কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে হকারের সেই আত্মাকে তার হত্যার কারণ জানতে চাইলে, তিনি জানান তার ৫০০ ডলার ধার ছিল এক জনের কাছে। সেই অর্থ তিনি দিতে পারেন নি বলে ঐ ব্যক্তি তাকে খুন করে। এসব ঘটনার ঠিক ৫০ বছর পর ওই বাড়ির মাটি খুঁড়ে পাওয়া গিয়েছিল একজন মানুষের কঙ্কাল।

মিসেস ফক্স আর তার সন্তানদের ভুতের সাথে এই কথোপকোথন সেসময় শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয় সারা পৃথিবীতে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। কারণ মৃত আত্মার সাথে মানুষের এই সংযোগ এবং মৃত কোন ব্যক্তির আত্মা জীবিত কারো মধ্য দিয়ে সংযোগ স্থাপন করার এই জ্ঞান সেই প্রথম সকলের সামনে উন্মুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশ বিদেশে।

মিসেস ফক্স ও তার সন্তানদের এই প্রেতচর্চা পরবর্তী সময়ে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও এ কথা নি:সন্দেহে বলা যেতেই পারে আধুনিক প্রেতচর্চা বা ভুতের সাথে মানুষের যোগাযোগের আঁতুড়ঘর নিউইয়র্কের হাইডসভিলের এই বাড়ি।

This article is in Bangla Language. It's about 'Hydesville' - the house of spiritualism.

References:

  1. http://www.fst.org/fxsistrs.htm
  2. http://www.smithsonianmag.com/history/the-fox-sisters-and-the-rap-on-spiritualism-99663697/
  3. http://www.nsac.org/FoxPropertyHistory.php

Featured Image: Mary Evans Picture Library

Related Articles