Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতম যুদ্ধ ব্যাটেল অব স্ট্যালিনগ্রাডের কাহিনী

ক্ষয়ক্ষতি, ভয়াবহতা কিংবা প্রাণহানির বিচারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীর যেকোন সময়ের যেকোন যুদ্ধের চেয়ে মারাত্মক। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত টানা ৬ বছর ধরে চলা এই বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এই বিশ্বযুদ্ধে একদিকে ছিল জার্মানি, জাপান, ইতালি এবং তাদের মিত্রদের নিয়ে গড়া অক্ষশক্তি অন্যদিকে ছিল আমেরিকা, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া ও তাদের মিত্রদের নিয়ে গড়া মিত্রশক্তি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানব সভ্যতার ইতিহাসে সৃষ্টি করেছিল এক নতুন বাঁকের। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অগ্রসর এতগুলো জাতি ইতিহাসে আর কখনই এভাবে টোটালিটারিয়ান ওয়ারে অর্থাৎ যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েনি। তাই শেষ হয়ে যাওয়ার ৭১ বছর পর আজও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস সমরকৌশলবিদ ও সমরবিদ্যায় আগ্রহীদের যেন চুম্বকের মত আকর্ষণ করে। শুধু তাই নয় সাধারণ মানুষের কাছেও ব্যাপক আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে প্রযুক্তিগতভাবে অগ্রসর জার্মানদের পরাজয়ের অন্যতম নিয়ামক হিসাবে বিবেচনা করা হয় এডলফ হিটলারের রাশিয়া আক্রমণের বিতর্কিত সিদ্ধান্তকে। রাশিয়াতে জার্মান বাহিনীর শোচনীয় পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল স্ট্যালিনগ্রাডের গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে হেরে যাওয়া। তাই বলা চলে এই একটি যুদ্ধই বদলে দিয়েছিল গোটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপট।

ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যালিনগ্রাড যুদ্ধের ইতিবৃত্ত নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের প্রতিবেদনটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস কয়েক ভলিউমে লিখেও শেষ করা যাবে না কারণ রাজনৈতিক, সামরিক ও পারিপার্শিকতার বিচারে এই যুদ্ধের ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, জটিল এবং সুদূরপ্রসারী। তাই পাঠকের কাছে সহজবোদ্ধ করে উপস্থাপনের জন্য এই প্রতিবেদনটি শুধু স্ট্যালিনগ্রাড যুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।

হিটলারের রাশিয়া আক্রমণ

২২ জুন ১৯৪১, ইতিহাসে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিন এডলফ হিটলারের নির্দেশে জার্মান আর্মির এক বিশাল বহর সোভিয়েত ইউনিয়ন জয় করার উদ্দেশ্যে পূর্বদিকে যাত্রা শুরু করল। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছিল অপারেশন বারবারোসা। তিনটি বড় বড় সেনাদলে বিভক্ত জার্মান বাহিনীর সংখ্যা কম করে হলেও ত্রিশ লক্ষের কম ছিল না। মোট দেড়শটি বিভিন্ন ডিভিশনের সাথে ছিল তিন হাজার ট্যাংক এবং অজস্র আর্টিলারি পিস। ধরা হয় বিংশ শতাব্দীর সেরা আর্মি ছিল রাশিয়া দখল করতে যাওয়া হিটলারের জার্মান বাহিনী।

অপারেশন বারবারোসার কিছু দুর্লভ ছবি source: https://s-media-cache-ak0.pinimg.com/originals/4d/04/1b/4d041b91a7714ce25501671d1f2589f0.jpg

অপারেশন বারবারোসার কিছু দুর্লভ ছবি source: tanks-encyclopedia.com

যুদ্ধের শুরুতে ফায়ার পাওয়ার কিংবা টেকিনিক্যাল দিক বিবেচনায় জার্মান আর্মি সোভিয়েত রেড আর্মির চেয়ে বহুগুণে শক্তিশালী ছিল। ফলে যা হাওয়ার তাই হল বিভিন্ন ফ্রন্টে পিছু হটতে শুরু করল রেড আর্মি। দুর্বার বেগে একে একে ইউক্রেন হয়ে রাশিয়ার ইউরোপ অংশের অনেকটা দখল করে ফেলল জার্মান সেনারা। হিটলারের লক্ষ্য তখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সোভিয়েত রাশিয়াকে পরাজিত করা। ক্রম অগ্রসরমান জার্মান বাহিনী তখন মস্কোর উপকন্ঠে কিন্তু ১৯৪১ এর ডিসেম্বরের প্রচন্ড শীত এবং রেড আর্মির প্রবল প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয় যায় জার্মান আর্মির মস্কো অভিযান। যার ফলস্বরূপ সোভিয়েত রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করার পরও সুপিরিয়র জার্মান বাহিনী তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হল। তবে এত সহজে দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না হিটলার। এবার নিজেই দায়িত্ব নিলেন ইস্টার্ণ ফ্রন্টের।

২) মানচিত্রে অপারেশন বারবারোসা

মানচিত্রে অপারেশন বারবারোসা; Image Source: historyplex.com

এদিকে খুব দ্রুত ফুরিয়ে আসছিল সোভিয়েত রাশিয়াতে অবস্থান করা জার্মান আর্মির তেলের রিজার্ভ। তাই হিটলার সিদ্ধান্ত নিলেন যে করেই হোক চেচনিয়ার তেলের খনিগুলো দখল করতে হবে। তাই ইস্টার্ণ জোনে সেনাবাহিনীর একটি অংশকে হিটলার পাঠিয়ে দিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ককেশাস অঞ্চলে অর্থাৎ চেচনিয়ার উদ্দেশ্যে। অন্য অংশকে পাঠালেন স্ট্যালিনগ্রাডের দিকে। তবে যতক্ষণে জার্মান আর্মি চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোজনিতে পৌঁছল ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। খনিগুলো রক্ষা করতে পারবে না জেনে সোভিয়েতরা শত্রুর হাতে পড়ার আগে তেলের খনিগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল।

 জার্মান ট্যাংক বহর source: www.gethistory.co.uk

জার্মান ট্যাংক বহর; Image Source: www.gethistory.co.uk

স্ট্যালিনগ্রাড আক্রমণ

কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল ভল্গার তীরে অবস্থিত স্ট্যালিনগ্রাড শহরটি। ভল্গা নদী শুধু ইউরোপের দীর্ঘতম নদীই নয়, ভল্গা বিভক্ত করেছে এশিয়া ও ইউরোপ এই দুই মহাদেশকে। ভল্গার ঐ পাড়ে অর্থাৎ এশিয়া অংশে অবস্থিত ছিল স্ট্যালিনগ্রাড। ডিক্টেটর স্ট্যালিন নিজের নামানুসারে রেখেছিলেন শিল্পোন্নত কিন্তু সাজানো গোছানো এই ছোট্ট শহরটির নাম। অন্যদিকে হিটলারের দুচোখের বিষ ছিলেন স্ট্যালিন। হিটলারও দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন যেকোন মূল্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যালিনগ্রাড দখলের জন্য।

অগ্রসরমান স্ট্যালিনগ্রাডের দিকে জার্মান সিক্সথ আর্মি source: rarehistoricalphotos.com

অগ্রসরমান স্ট্যালিনগ্রাডের দিকে জার্মান সিক্সথ আর্মি. Image Source: rarehistoricalphotos.com

সে সময়ে জার্মান সিক্সথ আর্মি হিটলারের অত্যন্ত এলিট ফোর্স হিসাবে পরিচিত ছিল। এর আগে ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও ইউক্রেনে বেশ কয়েকটি সফল অভিযান শেষে সিক্সথ আর্মির বীরত্বগাঁথা তখন দিকে দিকে। হিটলারের সিক্সথ আর্মি আস্তে আস্তে পৌঁছে গেল ভল্গার পাড়ে। সাত লক্ষ লোকের আবাস্থল স্ট্যালিনগ্রাড তখন জার্মান আর্মির অবরোধের মুখে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ফোর্থ প্যাঞ্জার আর্মিরও যোগ দেওয়ার কথা ছিল সিক্সথ আর্মির সাথে। কিন্তু তেল শঙ্কটে ভুগতে থাকা জার্মানরা কাঙ্খিত গতিতে এগুতে পারছিলনা। বলা বাহুল্য ট্যাংকের জার্মান প্রতিশব্দ হল প্যাঞ্জার। মূলত সিক্সথ আর্মিকে আর্মার সাপোর্ট দিয়ে স্ট্যালিনগ্রাড ঘিরে ফেলতে সাহায্য করার জন্য ফোর্থ প্যাঞ্জার আর্মিকে পাঠানো হয়েছিল।

যুদ্ধের আগের স্ট্যালিনগ্রাড source: www.awesomestories.com

যুদ্ধের আগের স্ট্যালিনগ্রাডের চিত্র Image Source: awesomestories.com

ব্যাটেল অব স্ট্যালিনগ্রাড

ব্যাটেল অব স্ট্যালিনগ্রাড শুরু হয়েছিল ১৯৪২ সালের আগস্ট মাসের ২৩ তারিখে। শহরের বাইরে অবস্থান করতে থাকা সিক্সথ আর্মির পদাতিক সৈন্যরা আক্রমণের আগেই জার্মান বিমান বাহিনী ক্রমাগত এক সপ্তাহ ধরে বোমাবর্ষণ করতে থাকে স্ট্যালিনগ্রাডে। দুর্ধর্ষ জার্মান জঙ্গি বিমানের মুহুর্মুহু আক্রমণের ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে যায় স্ট্যালিনগ্রাড। তারপর জার্মান পদাতিক সৈন্যরা প্রবেশ করতে শুরু করে স্ট্যালিনগ্রাডে। জার্মান আর্মি মনে করেছিল খুব সহজেই পতন হয়ে যাবে স্ট্যালিনগ্রাডের।  কিন্তু নিজের নামানুসারে রাখা শহর স্ট্যালিনগ্রাডকে রক্ষা করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করলেন জোসেফ স্ট্যালিন। তাই জার্মানদের তখনও ধারণা ছিল না আসল যুদ্ধ এখনও বাকি।

৫) ধ্বংসস্তূপের মধ্যে গেরিলাযুদ্ধরত সোভিয়েত রেড আর্মি source: www2today.com

ধ্বংসস্তূপের মধ্যে গেরিলাযুদ্ধরত সোভিয়েত রেড আর্মি; Image Source: 2today.com

শহরে প্রবেশের পর প্রবল বাঁধার সম্মুখীন হল জার্মানরা। তাই প্রত্যাশার চেয়ে ধীর গতিতে আগ্রসর হচ্ছিল জার্মান বাহিনী। শহরের ভগ্ন বিল্ডিংগুলো হয়ে উঠল রাশিয়ানদের একেকটি দুর্গ। দেখা যেত যে এলাকাগুলো জার্মানরা দিনের বেলায় দখল করত সে এলাকাগুলোই রাতে আবার পুনর্দখল করে নিত রাশিয়ানরা। সুপিরিয়র জার্মান আর্টিলারি ও আর্মার কোন কাজেই আসছিল না রাশিয়ান চোরাগুপ্তা গেরিলা হামলার কাছে। পুরো যুদ্ধটা তখন হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট। স্ট্যালিনগ্রাড পরিণত হল জার্মান বাহিনীর কাছে দুঃস্বপ্নপুরীতে। তাই গেরিলা যুদ্ধে ত্যক্ত বিরক্ত জার্মানরা এই যুদ্ধের নাম  দিয়েছিল র‍্যাটেনক্রিয়েগ বা ইঁদুরের যুদ্ধ। যুদ্ধের তীব্রতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে স্ট্যালিনগ্রাডের উপকণ্ঠে মামায়েভ কুরগান নামক পাহাড়টির মোট ১৪ বার দখল ও পাল্টা দখল হয়েছিল দুই শিবিরের মধ্যে। প্রচন্ড শীতের মধ্যেও সেবার এই পাহাড়টিতে তুষারের আচ্ছাদন পড়েনি কারণ এতবেশি শেলিং করা হয়েছিল যে পাহাড়ের সমস্ত বরফ গলে গিয়েছিল। তবে এত কিছুর পরেও জার্মান সৈন্যরা শহরের প্রায় ৯০% নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়েছিল।

সোভিয়েত রেড আর্মির পাল্টা হামলা

কিছুটা সংগঠিত হওয়ার পর ১৯ নভেম্বর শহরের বাইরে রাশিয়ান রিইনফোর্সমেন্ট এসে ঘিরে ধরল জার্মান বাহিনীকে। জার্মান ফোর্থ প্যাঞ্জার আর্মি তখন মাত্র তিন দিনের দূরত্বে ছিল স্ট্যালিনগ্রাড থেকে। তাই পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে পুরো শহরকে ঘিরে ধরা সম্ভব হল না জার্মান আর্মির পক্ষে। অর্থাৎ শহরের ভেতরে থাকা সিক্সথ আর্মি ফোর্থ প্যাঞ্জার আর্মির কোন সাহায্যই পেল না এই সামান্য দেরির কারণে। শুধু তাই নয় ১৯ নভেম্বরের আগে জার্মান বাহিনীকে স্ট্যালিনগ্রাডের বাইরে থেকে সাহায্য করে যাচ্ছিল রুমানিয়, ইতালিয় ও হাঙ্গেরীয়দের সম্মিলিত বাহিনী। কিন্তু রেড আর্মির নতুন সৈন্য সমাগমের পর বাইরের সাহয্য থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল শহরের ভেতরে থাকা জার্মান সিক্সথ আর্মি। অর্থাৎ অবরোধ করতে গিয়ে উল্টো অবরোধের শিকার হল জার্মানরা। রাশিয়ান অবরোধের শুরুর দিকে জার্মানরা চাইলেই অবরোধ ভেঙে পিছু হটে আসত পারত। অন্তত জার্মান সিক্সথ আর্মির প্রধান জেনারেল ফ্রেডরিখ পাউলাস সেটাই চাচ্ছিলেন।

১) ফিল্ড মার্শাল ফ্রেডরিখ পাউলাস http://www.i60.cz/images/00_201509221040370.jpg

ফিল্ড মার্শাল ফ্রেডরিখ পাউলাস; Image Source: www.i60.cz

কিন্তু হিটলার চাইছিলেন জার্মানরা যাতে একচুলও পরিমাণও সরে না আসে। নতুন বছরের শুরুতে অর্থাৎ ১৯৪৩ এর জানুয়ারিতে হিটলার জেনারেল পাউলাসকে প্রমোশন দিয়ে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করলেন উৎসাহ দিতে। আর কড়া নির্দেশ দিলেন যেকোন মূল্যে শহরটি ভেতর থেকেই দখল করতে। এদিকে জার্মানদের গোলাবারুদ এবং রসদ ফুরিয়ে আসছিল। কিন্তু হিটলার আশ্বাস দিলেন বিমানযোগে পৌঁছে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় রসদ ও অস্ত্র। সে সময় স্ট্যালিনগ্রাডে থাকা জার্মান সৈন্যদের প্রতিদিন দরকার ছিল ৮০০ টন রসদের অথচ বিমানযোগে সাপ্লাই ছিল মাত্র ১৪০ টন! শেষের দিকে অবশ্য হিটলার পিছু হটার অনুমতি দিয়েছিলেন তবে শহরের ভেতরের নিয়ন্ত্রণ অক্ষুন্ন রেখে। কিন্তু অস্ত্র ও খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়া জার্মান আর্মির পক্ষে এটি করা আদৌ সম্ভব ছিল না। বরং অনেকগুলো ছোট ছোট পকেটে বিভক্ত হয়ে পড়ল আটকে পড়া জার্মান বাহিনী। অনাহারে ও অস্ত্র শঙ্কটে একে একে মারা পড়তে শুরু করল সিক্সথ আর্মির সৈন্যরা। বলা হয় স্ট্যালিনগ্রাড যুদ্ধে প্রায় দেড় লক্ষ জার্মান সৈন্য মারা পড়েছিল আর বন্দী হয়েছিল আরও ৯৫ হাজার যার মধ্যে মাত্র ৫-৬ হাজার জার্মানকে জীবিত ফেরত দেওয়া হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। তবে সোভিয়েত রেড আর্মির ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি ছিল।

৭) স্ট্যালিনগ্রাডে ৯৫ হাজার যুদ্ধবন্দী জার্মান সৈন্যদের কিছু অংশ source: www2today.com

৭) স্ট্যালিনগ্রাডে ৯৫ হাজার যুদ্ধবন্দী জার্মান সৈন্যদের কিছু অংশ; Image Source: www2today.com

জার্মান বাহিনীর আত্মসমর্পণ

প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলার পর, ১৯৪৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করল জার্মান বাহিনী। এর আগেই ৩০ জানুয়ারি বন্দী করা হয়েছিল ফিল্ডমার্শাল ফ্রেডরিখ পাউলাসকে। এদিকে জার্মান বাহিনীর এই শোচনীয় পরাজয় সম্পর্কে শুরুতে দেশে থাকা জার্মানদের কিছুই জানানো হয়নি। যুদ্ধচলাকালীন ক্রিসমাসে ১৯৪২ সালের ডিসেম্বরে সারা দেশের মানুষ জানত জীবন বাজি রেখে লড়ে যাচ্ছে বীর জার্মান সেনারা। আর কিছুদিনের মধ্যেই চলে আসবে বিজয়ের সু সংবাদ। কিন্তু ততক্ষণে রেড আর্মির ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে জার্মান আর্মি। একদিকে ডিসেম্বরের প্রচণ্ড শীত এবং অন্যদিকে রসদের অভাবে তাদের পরিস্থিতি তখন অত্যন্ত নাজুক। তারপরও হিটলারের আদর্শে মোহমুগ্ধ লড়াকু জার্মানরা লড়ে যাচ্ছিল শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। একমাস পরেই ফ্রেব্রুয়ারির শুরুতে সারেন্ডার করতে বাধ্য হল সিক্সথ আর্মি।

একজন আহত যুদ্ধবন্দী জার্মান সৈন্য source: rarehistoricalphotos.com

একজন আহত যুদ্ধবন্দী জার্মান সৈন্য; Image Source: rarehistoricalphotos.com

জার্মানদের পরাজয়ের কারণ

স্পষ্টতই হিটলারের কিছু হটকারী সিদ্ধান্ত স্ট্যালিনগ্রাডে জার্মানদের পরাজয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হিটলার শীত আসার আগেই স্ট্যালিনগ্রাড বিজয়ের ব্যাপারে এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে জার্মান বাহিনীকে রাশিয়ার প্রচন্ড শীত মোকাবেলা করার মত পর্যাপ্ত গরম কাপড়ও সরবরাহ করা হয়নি। এছাড়া এত কিছুর পরও জেনারেল পউলিসকে ডিসেম্বরের শুরুতে পিছু হটার অনুমতি দিলে হিটলার হয়ত বাঁচাতে পারতেন তার এলিট সিক্সথ আর্মিকে। সাথে সাথে হয়ত সে যাত্রায় তারা এড়াতে পারতেন ভয়াবহ বিপর্যয়। হয়ত পরের বছর গ্রীষ্মে পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে পারত জার্মান আর্মি। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও জাত্যভিমানে ভুগতে থাকা হিটলারের আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত স্ট্যালিনগ্রাডে শুধু আড়াই লক্ষ জার্মান সৈন্যের কবরই খুঁড়েনি সাথে সাথে সূচনা করেছিল অক্ষশক্তির পরাজয়েরও!

৭)হিটলারের কিছু ঐতিহাসিক ভুলকে জার্মান বাহিনীর ভয়াবহ পরাজয়ের জন্য দায়ী করা হয় source: www.s-media-cache-ak0.pinimg.com

হিটলারের কিছু ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্তকে জার্মান বাহিনীর ভয়াবহ পরাজয়ের জন্য দায়ী করা হয়;  Image Source: yukle.mobi

শেষকথা

এতক্ষণ পর্যন্ত এই প্রতিবেদনে লেখা সব ইতিহাসই কোন না কোনভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ী রুশ, মার্কিন কিংবা মিত্রশক্তির ভাষ্য অনুসারে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাই এই পর্যায়ে একটি প্রশ্ন অবধারিতভাবে চলে আসবে স্ট্যালিনগ্রাডে আসলেও কি জার্মানরা হিটলারের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে হেরে গিয়েছিল? নাকি এর পেছনে অন্য কোন অজানা কারণ আছে? সেসব কন্সপিরেসি থিওরি এই ফিচারে ইচ্ছে করেই বাদ দেওয়া হয়েছে। কেননা স্ট্যালিনগ্রাডের প্রতিটি ইটে ইটে, প্রতিটি অভুক্ত জার্মান সৈন্যদের ডায়েরিতে কিংবা বোমার আঘাতে চিরপঙ্গু সোভিয়েত যুবকের কান্নায় যে ইতিহাস লেখা হয়েছে তাকে মাত্র দেড় হাজার শব্দে কোনদিনও পুরোপুরি বন্দী করা সম্ভব নয়।

This article is in Bangla language. It's the history of Battle of Stalingrad.

Featured Image: historia.ro

Source: 

1) http://www.history.com/topics/world-war-ii/battle-of-stalingrad

2) https://global.britannica.com/event/Battle-of-Stalingrad

3) http://www.historylearningsite.co.uk/world-war-two/famous-battles-of-world-war-two/the-battle-of-stalingrad/

4) https://www.youtube.com/watch?v=KPcM4o2yfXo

5) http://www.militaryhistoryonline.com/wwii/stalingrad/rattenkrieg.aspx

6) http://factslegend.org/40-facts-battle-stalingrad/

Related Articles