Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঋতুপর্ণ ঘোষ: এ এক অন্য সিনেমার কথা

ঋতুপর্ণের সিনেমা আর্ট ফিল্মে এনেছে অন্য এক মাত্রা, newsbd71.com

ঋতুপর্ণের সিনেমা আর্ট ফিল্মে এনেছে অন্য এক মাত্রা, newsbd71.com

ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্র, বিশেষত আর্ট ফিল্মে একটি অন্য মাত্রা যোগ করেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ। তার চলচ্চিত্রে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, সম্পর্কের বাইরের সম্পর্ক, নারীর ক্রমশ নারী হয়ে ওঠা- এসবই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে উঠে এসেছে। দর্শকসমাজকে আন্দোলিত করতে, আমাদের মস্তিষ্কের নিউরনে আলোড়ন তুলতে ঋতুপর্ণের চলচ্চিত্র নিজস্ব ঋজুতা সবসময়ই টিকিয়ে রেখেছে। প্রচলিত ধারাকে অন্য এক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন আর তার চলচ্চিত্রের দর্শকদেরও দেখতে শিখিয়েছেন তিনি। শুধু চলচ্চিত্র নির্মাণেই আটকে রাখেন নি তিনি নিজেকে, প্রতিভা ছড়িয়েছেন অভিনয়ক্ষেত্রেও। আজ ঋতুপর্ণ ঘোষ নির্মিত ও অভিনীত কিছু সিনেমায় আলোকপাত ঘটাতে যাচ্ছি।

তিতলী (২০০২)

মেঘ পিওনের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা, মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়, ব্যাকুল হলে তিস্তা!
মেঘের ব্যাগের ভেতর ম্যাপ রয়েছে…

পাহাড়ি উঁচু-নিচু রাস্তায় কোনো এক মেঘ পিওন বয়ে চলেছে বার্তা, গানটা শেষ হতেই কলিং বেল বাজলো, “টিং টং!”
এ বাড়িতে আছেন মা-মেয়ে, বাবা বাইরে কোথাও গিয়েছিলেন ব্যবসার কাজে, আজ তার ফেরার কথা। মা-মেয়েকে তাই এয়ারপোর্টে যেতে হবে। অপর্ণা সেন ও কঙ্কণা সেন দুজনের সম্পর্ক এখানেও মা-মেয়েরই। তাদের সহজ কথোপকথনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় কাহিনী। মেয়ের পছন্দের ফিল্মস্টার নিয়েই বেশিরভাগ কথা!

তিতলী (২০০২) , bethlovesbollywood.com

তিতলী (২০০২) , bethlovesbollywood.com

একটু পর গল্পে মোড় আসে, দেখতে দেখতে দর্শক অনেকটাই আঁচ করে নিতে পারবেন ঘটনার সংযোগ। কিন্তু ঋতুপর্ণ এতে যা দেখাতে চেয়েছেন তা মূলত নিছক ঘটনা নয়, তিনি তুলে এনেছেন সম্পর্কের বাইরের সম্পর্ক। অপর্ণা সেনের চরিত্রের পরিপক্বতা কীভাবে কঙ্কণার (নামচরিত্রে তিতলী) ছেলেমানুষিকে আগলে রাখে সস্নেহে এবং কিছুটা সময় পেরিয়ে গেলেই কী করে তারা দুজনেই হয়ে উঠেন সহযাত্রী- এসব কিছু ক্রমশ আচ্ছন্ন করবে দর্শককে। সাথে পাহাড়ি হিমেল হাওয়া যেন পর্দার বাইরে এসেও একটু কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়ে যায়!

 

বাড়িওয়ালী (২০০০)

‘বাড়িওয়ালী’-তে কিরণ খেরের অভিনয় তাকে এক ভিন্ন রূপে উপস্থাপন করেছে। শুরু থেকেই তার সেই অভিব্যক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে যে ভেতরের দমিয়ে রাখা আকুলতা, তার প্রায় রাতে দেখা অধিবাস্তব স্বপ্নগুলো যেন একটি ক্যানভাসে এঁকে গেছে একা এক নারীর সমগ্র অস্তিত্বকে।

বাড়িওয়ালী (২০০০), paushali.com

বাড়িওয়ালী (২০০০), paushali.com

সে ক্যানভাসে রং নেই, তুলি নেই, আছে শুধু কখনো কখনো থমকে যাওয়া নীরবতা। কাজের মেয়ে মালতী আর তার প্রেমিককে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পেয়ে বনলতার দৃষ্টিতে যা ছিল তা কাম নয়, ঈর্ষা নয়। সে দৃষ্টি শুধু এক বঞ্চিতের দৃষ্টি। তৃষ্ণার্ত মরুভূমিতে একফোঁটা জল পড়লে তা যেমন শুষে নেয়, তেমনি বনলতাও নিজের মধ্যে ধারণ করতে চেয়েছিলো আকণ্ঠ প্রেম। তা কি সে পায়, নাকি থেকে যায় চিরবঞ্চিত?
অদ্ভুত এক মনস্তত্ত্ব বর্ণনা করে গেছেন ঋতুপর্ণ, শুধু বনলতার চরিত্রেই নয়, পাশাপাশি বহমান অন্যান্য জীবনেও।

অন্তরমহল (২০০৫)

বিশাল এক জমিদারবাড়ি, রূপকথার রাজাদের মতই এই জমিদারের মনেও নেই সুখ। সন্তান নেই তার, তার যে রাজচক্কোত্তি ছেলে চাই, ছেলে! এতে সুয়োরানী-দুয়োরানী আছে কি না জানি না, তবে জমিদারের দুই স্ত্রী আছেন।

অন্তরমহল (২০০৫), masalawblogspot.com

অন্তরমহল (২০০৫), masalawblogspot.com

সন্তানদানে অক্ষম এই জমিদার রোজ যে কী করে আর কত প্রকারে তার স্ত্রীর কাছ থেকে ‘পুত্রসন্তান’ নামের ফসলটি ফলাতে চান, তাই কাহিনীর মূলধারা হয়ে চলতে থাকে। ওদিকে আবার এক ফিরিঙ্গী চিত্রকর এসে রয়েছেন জমিদারের পোর্ট্রেট আঁকবেন বলে! এই চিত্রকরই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করে গেছেন অন্তরমহলের। দেখতে পাই কৃষ্ণনগর থেকে আসা এক তরুণ মৃৎশিল্পীকে, যাকে তলব করা হয় দুর্গাপূজার মূর্তি গড়তে, তাও এক বিশেষ রূপে! কাহিনীর গতিময়তায় শিল্পীটিও জড়িয়ে পড়ে জমিদারবাড়ির জীবনযাত্রায়। পাশাপাশি তৎকালীন সমাজব্যবস্থা, পুরোহিতদের সংস্কারাধিপত্য সবই সমান তালে চলেছে এবং এসব কিছুর ফাঁকে ফাঁকে ‘অন্তরমহল’ সবটুকু জায়গা জুড়ে থাকে।

দহন (১৯৯৭)

দুর্ঘটনা সবার জীবনেই কোনো না কোনো সময় আসে। কারো জীবন থেকে আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায় স্মৃতির দাগ, আর কারো জীবনে থেকে যায় ‘দহন’ হয়ে। খুব স্বাভাবিক হাসি-খুশি বিবাহিতা একটি নারীর জীবনে শ্লীলতাহানির মতো দুর্ঘটনা যে মৃত্যুর চাইতেও গাঢ় এ সমাজে! এই স্মৃতির দাগ কি আদৌ মিলিয়ে যাবার? এই ‘দহন’কে ঋতুপর্ণ দেখিয়েছেন আগুনের লেলিহান শিখায়, তবে একজন নারীর মধ্য দিয়ে নয়, দুজনের।

দহন (১৯৯৭), ravepad.com

দহন (১৯৯৭), ravepad.com

একজন যিনি আগুনে পুড়লেন, আরেকজন যিনি তাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও পুড়লেন। এ সমাজ, সমাজের মানুষ নারীর শারীরিক দুর্বলতাকে পুঁজি করে পিষে মারে তাকে। আবার এ সমাজই নারীর বীরত্বকে মেনে নিতে না পেরে করে পাল্টা আক্রমণ। কী বীভৎস হয়ে ওঠে চারপাশ নারীর জন্য, দহন তার একটি চলমান দলিল। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস এর কাহিনীটি এখানে অভিনীত, কিন্তু দেখলেই বোঝা যায়, চির পরিচিত এ গল্প। পাশের বাড়ির মেয়েটি থেকে শুরু করে অচেনা কোনো নারী, কেউ এই দহনের বাইরে নয়।

রেইনকোট (২০০৪)

এটি ঋতুপর্ণ ঘোষ নির্মিত একমাত্র হিন্দি সিনেমা। ও’ হেনরীর ছোট গল্প ‘গিফট অফ মেজাই’ থেকে অনুপ্রাণিত এই সিনেমাটি একটি হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের কথা বলেছে। যার সাথে হেসেছি, খেলেছি, ভবিষ্যতের বহু স্বপ্নও সাজিয়েছি- সে মানুষটি যদি হঠাৎ করে অচেনা জগতের বাসিন্দা হয়ে যায়? আর অনেক বছর পর যদি আবারো তার খোঁজ মেলে, নচিকেতার সেই গানটির মতোই,

যদি হঠাৎ আবার দেখা হয়ে যায়, কোনো পথের বাঁকে, বহু কাজের ফাঁকে? শুধু জানতে চাইবো, আজো মনে পড়ে কি? মনে পড়ে কি স্মৃতি নাকি দিয়েছ ফাঁকি?

তবে? এই সিনেমাতে ঋতুপর্ণ বোধহয় এই উত্তরগুলোই খোঁজার চেষ্টা করেছেন। পেয়েছেন? প্রাপ্তির কথা বলতে গেলে, হয়তো উত্তরের চাইতেও অনেক বেশিই মেলে চরিত্রকথনে।

রেইনকোট (২০০৪), junglekey.in

রেইনকোট (২০০৪), junglekey.in

একটি রেইনকোট, দু’টি মানুষ, অনবরত নিজেদের সুখ বর্ণনা আর ‘গিফট অফ মেজাই’- সবকিছুর অপুর্ব মিশেলে রেইনকোট সিনেমাটি অনেক বেশি গভীরতার দাবি রাখে আর দর্শককেও ডুব দিতে হয় সে গভীরতায়।

চোখের বালি (২০০৩)

‘চোখের বালি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উপন্যাস যাতে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের স্পষ্ট প্রকাশ ঘটেছে এবং এর অবলম্বনেই ঋতুপর্ণ ঘোষ নির্মাণ করেন সিনেমাটি। ‘চোখের বালি’র সবচেয়ে প্রবল যে চরিত্র ‘বিনোদিনী’, তাতে ঐশ্বর্য রাই এর অনবদ্য অভিনয় যেন বিনোদিনীকে বইয়ের পাতা থেকে একেবারে চোখের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়!

BDYouth.com

BDYouth.com

একজন বিধবার কাছে কামনা-বাসনা মানেই অনিবার্য পাপ, বিনোদিনীর চরিত্রে যে আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয় তাকে একপর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ তার উপন্যাসে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে কাশী পর্যন্ত নিয়ে যান। এই শেষটুকু নিয়ে কবিগুরুর আমৃত্যু আক্ষেপ ছিল। বিনোদিনীকে কাশী পাঠিয়ে যে ভুল তিনি করেছেন, পাঠককুলের নিন্দায় তার স্খলন হয়েছে বলে তিনি মনে করতেন। চলচ্চিত্রে এসে পরিচালক কিন্তু কারো কাছে বশ্যতা স্বীকার করলেন না, বিনোদিনী একজন বিধবা বলেই যে তার সাধ-আহ্লাদ করা পাপের শামিল এটি ঋতুপর্ণ মেনে নেন নি। এজন্যই সিনেমার শেষটুকু উপন্যাস থেকে ভিন্নতা পেয়েছে। উপন্যাসের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলচ্চিত্রে এসে পূর্ণতা লাভ করেছে।

This article is in Bangla language. It's about the life and works of Rituparno Ghosh; an Indian film director, actor, writer.

Featured Image: News Cafe Bangla

Related Articles